দেশে দ্রুত তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল সেবা চালু করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিক থাকলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিটক চলতি বছরই পরীক্ষামূলকভাবে এ সেবা চালু করবে।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত ফি ও চার্জ পর্যালোচনা সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, "দীর্ঘ আলোচনার পর থ্রিজি লাইসেন্স উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।"
প্রধানমন্ত্রী থ্রিজি তরঙ্গ বরাদ্দের বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীকে তাগিদ দিয়েছেন বলে সভায় উপস্থিত একটি সূত্র জানায়।
অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিফোন অপারেটরস ইন বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব আবু সাঈদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "থ্রিজি স্পেকট্রাম নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে- এটাই স্বাভাবিক। এটা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।"
"তবে টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, তরঙ্গ বরাদ্দের বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে চূড়ান্ত করা হবে," যোগ করেন তিনি।
তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চ গতিতে তথ্য পরিবহন সম্ভব বলে মোবাইল ফোনেই টিভি দেখা, জিপিএসের মাধমে পথ নির্দেশনা পাওয়া, উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহারসহ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়া সম্ভব।
বর্তমানে টুজি (দ্বিতীয় প্রজন্ম) তরঙ্গ দিয়েই থ্রিজি'র কিছু সেবা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে আবু সাইদ খান বলেন, "এই অবস্থায় কেবল একটি তরঙ্গকে থ্রিজি সেবার জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া অর্থহীন।"
বৈঠক শেষে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজু বলেন, থ্রিজি লাইসেন্সের নিলামে দেশি বা বিদেশি যে কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে।
"সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই টেলিটক থ্রিজি প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করবে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিটক এ সুবিধা পাবে। ৬ মাসের জন্য টেলিটককে বাণিজ্যিকভাবে এ সেবা চালুর সুযোগ দেওয়া হবে।"
২০১২ সালের মধ্যে থ্রিজি লাইসেন্সের নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান ডাক ও টেলিকম সচিব সুনীল কান্তি বোস।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব জানান, মোবাইল ফোন অপারেটরদের লাইসেন্স ফি, লাইসেন্স নবায়ন ফি ও ভিওআইপি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
টেলিকম অপারেটরদের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন, ভিওআইপির লাইসেন্স দেওয়া এবং 'সোশ্যাল অবলিগেশন ফি' ১ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
টেলিকম কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক রাজস্বের ১ শতাংশ হারে 'সোশ্যাল অবলিগেশন ফি' দিতে হবে। লাভজনক নয় বলে যে সব স্থান বা ক্ষেত্রে ব্যবসার প্রসারে প্রতিষ্ঠানগুলো অনাগ্রহ দেখায়, এই অর্থ থেকে সেই ক্ষেত্রগুলোতে সুবিধা দেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, মশিউর রহমান, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টার এ বৈঠকে অংশ নেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এমএ করিম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, অর্থ সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোস, প্রধানমন্ত্রী প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের বিটিআরসি'র প্রধান জিয়া আহমেদ উপস্থিত ছিলেন এ বৈঠকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন