বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১১

গিরীশচন্দ্র সেনের ‘তাপসমালা (১৮৮০)’

তাপসমালা
প্রথম প্রকাশ: ১৮৮০
গিরীশচন্দ্র সেন
(১৮৩৫ ১৮৯৬)
untitled-2.jpg
তাপসমালা (১৮৮০–১৮৯৬) ফার্সি কবি শেখ ফরিদ-উদ্-দ্বীন আত্তার রচিত ‘তাজকিরাত-উল-আউলিয়া’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ। গিরীশচন্দ্র সেন মূল ফার্সি থেকে এটি বাংলায় অনুবাদ করেন।
গিরীশচন্দ্র সেন ফার্সি ভাষা জানতেন। মোঘল আমলে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হিন্দু পরিবারে ফার্সি শেখার প্রচলন ছিল। কারণ, ফার্সি ছিলো মোঘল রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ভাষা। ইংরেজরা মোঘলের স্থলাভিষিক্ত হবার পরেও দীর্ঘ দিন ফার্সির স্থলাভিষিক্ত হয়নি ইংরেজি। গিরীশচন্দ্র সেনের জন্মের দুই বছর পর, ১৮৩৭ সালে ফার্সির বদলে ইংরেজিকে প্রশাসনিক ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ততদিনে ফার্সির সাথে ভারতের সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে গেছে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই ফার্সির প্রচলন উঠে যায়নি। তবে আরো আগে থেকেই ইংরেজদের ক্ষমতাসীন হবার সাথে তাল মিলিয়ে ইংরেজির প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে এবং ফার্সির প্রতি আগ্রহ কমতে থাকে।

গিরীশচন্দ্র সেন কেবল প্রশাসনিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিকতায় ফার্সি শিখেছিলেন বলা যায় না, কেননা তিনি আরবী ভাষাও শিখেছিলেন। আল-কোরানের প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন তিনি, মূল আরবী থেকে।
শেখ ফরিদ-উদ্-দ্বীন আত্তার-এর জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য আছে। মনে করা হয় তিনি ১০০ বছর (১১৪৫–১২৪৬) বেঁচে ছিলেন, জন্ম নিয়েছিলেন বর্তমান ইরানের ‘নিশাপুর’। নিশাপুরে তার মাজার আছে। শেখ ফরিদ-উদ্-দ্বীন আত্তার ‘নিশাপুরের আত্তার’ বলে খ্যাত ছিলেন। ফার্সি শব্দ আত্তার-এর অর্থ ‘সুগন্ধি’। নিচে তাঁর কবিতার কয়েকটি লাইনের ইংরেজি অনুবাদ দেওয়া হলো:
In the dead of night, a Sufi began to weep.
He said, “This world is like a closed coffin, in which
We are shut and in which, through our ignorance,
We spend our lives in folly and desolation.
When Death comes to open the lid of the coffin,
Each one who has wings will fly off to Eternity,
But those without will remain locked in the coffin.
So, my friends, before the lid of this coffin is taken off,
Do all you can to become a bird of the Way to God;
Do all you can to develop your wings and your feathers.”
–Farid ud Din Attar, translation by Andrew Harvey and Eryk Hanut - ‘Perfume of the Desert’
শেখ ফরিদ-উদ্-দ্বীন আত্তারের সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের নাম ‘মানতেক্ আত-তয়ির’ বা Conference of the Birds’। আত্তারকে সুফি সাহিত্যের একজন আদি গুরু ধরেন অনেকেই। তাঁর মৃত্যু বিষয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। মোঙ্গলদের হাতে বন্দী আত্তারকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় একজন একশো স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে তাকে কিনতে চান। তখন আত্তার তাঁকে ওই দামে বিক্রি না করতে পরামর্শ দেন। মোঙ্গলরা তাঁকে বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুক্ষণ পরে একজন এসে একটি খড়ের ব্যাগের বিনিময়ে আত্তারকে কিনতে চান। এবারে আত্তার তাঁকে বিক্রি করে দিতে বলেন। তখন মোঙ্গলরা তাঁকে হত্যা করে।
girish_chandra_sen.JPG
…………
গিরীশচন্দ্র সেন [১৮৩৫-১৮৯৬]
…………
আত্তারের একমাত্র গদ্য রচনা ‘তাজকিরাত-উল-আউলিয়া’ অর্থ ‘আউলিয়াদের স্মৃতি/কাহিনী/গল্প/জীবনী’। গিরীশচন্দ্র সেন বাংলায় এটির নাম রাখেন তাপসমালা’। এই বইয়ে ফরিদ-উদ্-দ্বীন আত্তার সুফি ঐতিহ্যের সাধক ও আউলিয়াদের জীবনী লেখেন। ফার্সিতে দুই খণ্ডের বই মোট ছয় খণ্ডে অনুবাদ করেন গিরীশচন্দ্র সেন, প্রকাশিত হয় ১৮৮০ থেকে ১৮৯৬ সালের মধ্যে। বলা হয়, ব্রাহ্মধর্মের পুরোহিত কেশবচন্দ্র সেনের কাছে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন এবং কেশবচন্দ্রের অনুরোধ বা নির্দেশনায় গিরীশচন্দ্র ‘তাজকিরাত-উল-আউলিয়া’ অনুবাদ করেন।
‘তাজকিরাত-উল-আউলিয়া’-এর বাংলা অনুবাদ তাপসমালা দুই খণ্ড একত্রে [২৬ জনের জীবনী] আর্টস ই-বুক হিসেবে প্রকাশিত হলো।
ভূমিকা: এস এম রেজাউল করিম
গিরীশচন্দ্র সেনের তাপসমালা থেকে:
এব্যক্তি ‘আনলহক’ (আমি ঈশ্বর) বলিয়া থাকে, অতএব তাঁহার এই বাক্যকে বলবৎ করিয়া খলিফা প্রাণদণ্ডের অভিমত প্রকাশ করিলেন।
হোসেন মনসুরকে লোকে অনুরোধ করিল, “বল তুমি, ‘হু অলহক’ (তিনি ঈশ্বর)।”
মনসুর কহিলেন, “হা, সমুদায় তিনি; কিন্তু তোমরা বলিতেছ যে, তিনি হারাইয়া গিয়াছেন, বরং হোসেন মনসুর হারাইয়া গিয়াছে, গভীর সমুদ্র বিলুপ্ত হয় না, ন্যূন হয় না।”
পরে সকলে জ্বনিদকে যাইয়া বলিল, “হোসেন যে এই কথা বলে, তাহার কি ব্যাখ্যা নাই?” হায়, জনিদ বলিলেন, “শরীরে আঘাত কর, কিম্বা তাহাকে কাটিয়া ফেল, এখন অর্থ ব্যাখ্যা করার সময় নয়।”—মনসুর হাল্লাজের জীবনী, তাপসমালা [মূল ফার্সি: তাজকিরাত-উল-আউলিয়া, শেখ ফরিদ-উদ্-দ্বীন আত্তার]
attar_nishapur_iran.jpg
ইরানের নিশাপুরে শেখ ফরিদ উদ্-দ্বীন আত্তারের কবর
অনলাইনে পড়ুন অথবা/এবং ডাউনলোড করুন:
গিরীশচন্দ্র সেনের ‘তাপসমালা (১৮৮০)’

গিরীশচন্দ্র
অনলাইনে পড়তে উপরের ছবিতে ক্লিক করুন
অনলাইন পাঠের জন্য মাউজ ক্লিকে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর মতো করে ফ্লিপ করা যাবে। ই-বুক উইন্ডো প্যানেলের নিচের দিকে ’save pages’ বাটনে ক্লিক করে ই-বুকটির পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড করা যাবে। এছাড়া জুম করার জন্য ক্লিক করতে হবে, আর ফুলস্ক্রিন করার জন্য ই-বুক প্যানেলে নির্দিষ্ট বাটন আছে।
এছাড়া পিডিএফ ফাইলে সূচীপত্রে তাপস/তাপসীর নামে লিংক করা আছে। নামে ক্লিক করলেই উদ্দিষ্ট পাতায় যেতে পারবেন পাঠক। অনলাইনে পড়ার ক্ষেত্রেও এটি কাজ করবে।

ডাউনলোড করুন: গিরীশচন্দ্র সেনের ‘তাপসমালা (১৮৮০)’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন