দেবদাস
প্রথম প্রকাশ: ১৯১৭
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(১৮৭৬– ১৯৩৮)
১৯০১ সালে রচিত হলেও দেবদাস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে।
প্রকাশের পরে পরেই ভারত উপমহাদেশের বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়।
শরৎচন্দ্র তখন খ্যাতিমান সাহিত্যিক। দেবদাস-এর মতো বাংলা ভাষার আর কোনো উপন্যাস সিনেমা নির্মাতাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। দেবদাস-এর প্রথম চলচ্চিত্ররূপ ১৯২৮ সালে। এটি ছিলো নির্বাক ছবি। এরপর ১৯৩৫ ও ৩৬ সালে আবার নির্মিত হয়। এ দুটি সবাক। প্রথমটি বাংলায়, দ্বিতীয়টি হিন্দিতে। ১৯৫৫, ২০০২ ও ২০০৯ সালে আবার হিন্দিতে সিনেমা নির্মিত হয়। এ ছাড়া তামিল ও অহমিয়া ভাষায় নির্মিত হয়। বাংলা ভাষায় আরো তিনবার। কোলকাতায় একবার, বাংলাদেশে দুইবার (দুটি-ই চাষী নজরুল ইসলামের–একটি মুক্তির অপেক্ষায়)।
সিনেমার কাহিনী হিসেবে দেবদাস জনপ্রিয় হলেও সাহিত্য আলোচনায় দেবদাসকে খুব একটা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, ১৯৩৫ সালে নির্মিত দেবদাস শরৎচন্দ্র পছন্দ করেননি বলে জানা যায়। দেবদাসের মৃত্যুসংবাদে পার্বতীর উদ্ভ্রান্ত দৌঁড় উপন্যাসে না থাকলেও সিনেমায় ঢোকানো হয়। সিনেমা নির্মাতার তরফে এই ‘দৌঁড়’কে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি একটি দৃশ্যের মাত্র, কিন্তু চিন্তা উদ্রেককারী।
……..
দেবদাস (১৯৩৫) সিনেমায় কুন্দন লাল সায়গল ও যমুনা বড়ুয়া
……..
উপন্যাস হিসেবে দেবদাস নিয়ে আলোচনা খুব পাওয়া না গেলেও সিনেমা নিয়ে বহু আলোচনা আছে। আলোচনার একটা দিক হলো—রাধাকৃষ্ণ কাহিনীর পুনর্লিখন দেবদাস। দেবদাস, পার্বতী ও চন্দ্রমুখী যথাক্রমে কৃষ্ণ, দুর্গা/পার্বতী এবং চন্দ্রমুখী চরিত্রটি মধ্যযুগের রাজস্থানের বৈষ্ণবী মীরা বাঈ (১৪৯৮—১৫৪৭)। মীরা বাঈ-এর বহু ভজন এখনো প্রচলিত এবং জনপ্রিয়। সমালোচকরা বলছেন, দেবদাস চরিত্রের নিষ্ঠুরতা ও দুষ্টামির উৎস কৃষ্ণ চরিত্র। দেবদাস-পার্বতীর মিলন না হওয়া রাধাকৃষ্ণকে প্রবলভাবে সিগনিফাই করে। এবং এই সিগনিফিকেশনের মধ্য দিয়ে বিচ্ছেদকে মিলনের উর্ধ্বে স্থায়ী আসন করে দেয়।
………
মীরা বাঈ (১৪৯৮—১৫৪৭)
……..
অন্য দিক হলো—শরৎচন্দ্র তাঁর সময়ে বিশিষ্ট সমাজ সমালোচক সাহিত্যিক হবার পরেও দেবদাস আসলে সমাজ ব্যবস্থাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে। কতক সমালোচনা করলেও সমাজের মূলনীতিকে ভাঙেননি শরৎচন্দ্র।
এই সব সমালোচনা এসেছে মূলতঃ দেবদাস সিনেমা থেকে। কিন্তু কোনো সিনেমাতেই উপন্যাসের এসেন্সকে রাখা হয়নি। উপন্যাসে দেবদাসের পরিণতির জন্য দায়ী হিসেবে দেবদাসকেই চিহ্নিত করেছেন শরৎচন্দ্র। আর সবগুলি সিনেমাতেই দেবদাস ও তাঁর প্রেমকে সমাজের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সিনেমায় দেবদাস হিরো, বর্ণপ্রথা এন্টি-হিরো; আর উপন্যাসে দেবদাস নিজেই এন্টি-হিরো। সিনেমায় ‘ব্যক্তিক চরিত্রকথা’ থেকে ‘সামাজিক বৃত্তান্ত’-এ পর্যবসিত দেবদাস।
……..
১৯৫৫ সালের হিন্দী দেবদাস-এর পোস্টার। অভিনয়ে ছিলেন দিলীপ কুমার, বৈজয়িন্তীমালা ও সুচিত্রা সেন
……..
ইংরেজি সাহিত্যের সাথে পরিচিত বাংলাভাষীর জন্য প্রেম ও প্রেমিক যোগান দিয়েছিলেন শেক্সপিয়র। কিন্তু বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনার পরেও বলা যায়, প্রকাশের পর থেকেই বহু বাংলাভাষীর কাছে প্রেমিক ও প্রেমকাহিনী হিসেবে দেবদাস শেক্সপিয়রের বেশ কিছু চরিত্রকে হটিয়ে দিয়েছে। একই সাথে প্রেমের ক্ষেত্রে আত্মপীড়ন, বিচ্ছেদ ও সমাজের কাছে নতির কিছু শিক্ষাও দিয়ে থাকতে পারে দেবদাস।
আর্টস ই-বুক সিরিজে এবারে প্রকাশিত হলো শরৎচন্দ্রের দেবদাস।
অনলাইনে পড়ুন অথবা/এবং ডাউনলোড করুন:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন