মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০১০

বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানি

বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানি
বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষের জীবনধারাকে করে দেয় অতীব সহজতর। বিংশ শতাব্দীতে মোবাইল আবিষ্কার মানুষের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। মোবাইল বর্তমানে মানুষের এমন প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এটি ছাড়া যেন এক মুহূর্তও চলা সম্ভব না। কারণ মানব প্রকৃতির স্বভাব “একে অপরের কাছে থাকা” যা মোবাইল ছাড়া বর্তমানে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অতীব প্রয়োজনীয় মোবাইলের টুকিটাকি বিষয় নিয়ে কারেন্ট ইস্যু পাঠকদের জন্য আমাদের এ আয়োজন।
মোবাইল ফোন
এটি তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ। মোবাইল অর্থ “স্থানান্তরযোগ্য”। যেহেতু এই ফোন সহজে যে কোনো স্থানে বহন করা এবং ব্যবহার করা যায় তাই এর নাম মোবাইল ফোন রাখা হয়েছে। এটি ষড়ভুজ আকৃতির ক্ষেত্র বা এক একটি সেল নিয়ে কাজ করে বলে একে “সেলফোন” নামেও অভিহিত করা হয়। এর অপর নাম “সেলুলার ফোন”
উদ্ভাবন : মটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ড. মার্টিন কুপারকে মোবাইল ফোন উদ্ভাবকের মর্যাদা দেয়া হয়। তিনি ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে সফলভাবে এ ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন।
বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম মোবাইল ফোন চালু হয়। ঢাকা শহরে প্রথম Hutchison Bangladesh Telecom Limited (HBTL) AMPS মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের সেবা শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬টি মোবাইল ফোন কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হলো সিটিসেল, একটেল, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, টেলিটক ও ওয়ারিদ। এদের মধ্যে কেবল সিটিসেল সি.ডি.এম এবং বাকি পাঁচটি জি.এস.এম প্রযুক্তির মোবাইল সেবা দিচ্ছে।
সিটিসেল
এটি একমাত্র সি.ডি.এম পদ্ধতির নেটওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করে। এটি বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল কোম্পানি যার সেবা দিচ্ছে “প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড।” এটি গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের ৪র্থ বৃহত্তম মোবাইল ফোন কোম্পানি। এটি আগস্ট, ১৯৯৩ সালে প্রথম সেবা প্রদান শুরু করে। এর স্লোগান হলো Because we care.
গ্রামীণফোন
বাংলাদেশের একটি সর্ববৃহৎ সেবাপ্রদানকারী মোবাইল ফোন কোম্পানি। এটি ১৯৯৬ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স পেয়ে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে আত্মপ্রকাশ করে। এর কয়েকটি সংযোগ হলো স্মাইল, স্মাইল পি এসটি এন, ডিজ্যুস এবং এক্সপ্লোর প্যাকেজ। এটি বিভিন্ন সার্ভিসের পাশাপাশি বর্তমানে ইডিজিই সেবা চালু করায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও ইন্টারনেটের সুবিধা পাচ্ছে। ব্যবহার ও গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ এই মোবাইল ফোন কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটিরও বেশি যা বাজারের ৫০ শতাংশেরও বেশি অংশ দখল করে আছে। এর স্লোগান হলো “দূরত্ব যতই হোক কাছে থাকুন।”
একটেল
এটি বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম মোবাইল ফোন কোম্পানি, এটি টি.এম. ইন্ট্যারন্যাশনাল (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্রান্ড। এটি ১৫ নভেম্বর ১৯৯৭ সাল থেকে গ্রাহকসেবা কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাতেই রয়েছে এদের নেটওয়ার্ক। তবে পাহাড়ী এলাকায় তথা দেশের পূর্বাঞ্চলে এদের গ্রাহক সংখ্যা তুলনারূলক বেশি। ৬৫ লক্ষেরও অধিক গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে এ নেটওয়ার্কের। এর স্লোগান হলো “এক ধাপ এগিয়ে”।
বাংলালিংক
এটি গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এটি সেবা টেলিকম লিমিটেডের একটি ব্রান্ড যা ২০০৪ সালে ওরাসকম টেলিকম, সেবা টেলিকম থেকে ১০০% শেয়ার কিনে নিয়ে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলালিংক নাম নিয়ে বাজারে আসে। বর্তমানে এর বিভিন্ন প্যাকেজের মধ্যে বাংলালিংক দেশ, রং ইত্যাদি প্যাকেজ রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী নেটওয়ার্ক হিসেবে সেবা দিচ্ছে। বর্তমানে এটি ১১ মিলিয়নেরও বেশি গ্রাহক সেবা দিচ্ছে। বর্তমানে এ নেটওয়ার্কের ব্যবহার সর্বাধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ ধরা হয় এর সাশ্রয়ী কলরেট। এর স্লোগান হল You First.”
টেলিটক
এটি বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন মোবাইল ফোন কোম্পানি। এটি ২০০৫ সালে আত্মপ্রকাশ করলেও ৩১ মার্চ ২০০৬ সালে পুরোপুরি এর কার্যক্রম শুরু হয়। এটির গ্রাহকরা টেলিটকের কাছ থেকে প্রত্যাশানুযায়ী কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না বলে এর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্তনেই। তথাপিও বর্তমানে এটি দেশের ৫ম বৃহত্তম মোবাইল ফোন কোম্পানি। এর স্লোগান হলো “আমাদের ফোন।”
ওয়ারিদ
এটি ধাবি গ্রুপের মোবাইল ফোন সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এটি ১০ মে ২০০৭ সালে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে এর রয়েছে নানা ধরনের প্যাকেজ এবং প্রতি প্যাকেজে আলাদা আলাদা সুবিধা ও বোনাস। এর গ্রাহক সংখ্যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে।
বর্তমান পৃথিবীতে প্রতি দশ জনের ৬টি মোবাইল ফোন রয়েছে। ২০০৭ সালে বিশ্বে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪১০ কোটিতে গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ কোটিতে পৌঁছেছে। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু দরিদ্র দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যবহার বর্তমানে প্রায় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষিণ কোরিয়া এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারে ইন্টারনেটের ব্যবহার কমেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন