মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১

অন্ধকার ঘরে দু’ভাইয়ের ১৫ বছর.

 অজ্ঞাত কারণে দু’টি অন্ধকার ঘরে ১৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন দুই সহোদর এস এম ফজলুল করিম মানিক (৩৯) ও এস এম নুরুন্নবী রতন (৩৬)।

এলাকাবাসীর মধ্যে কেউ বলছে সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে, আবার কেউ বলছে পীর ফকির বা তাবিজ কবজের কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন দু’ভাই এ জীবন বেছে নিয়েছেন।

চিকিৎসক বলছেন, এরা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।

সোমবার বগুড়া শহরের মালতিনগর নামাপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির অন্ধকার ঘর থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।

বগুড়া পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ারের নেতৃত্বে পুলিশ ও মানবাধিকার কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে ভর্তি করেছে।

মানিক-রতনের বাবা আব্দুল লতিফ সরকার স্বাভাবিক হলেও মা ফাতেমা বেগম এবং বোন ম্ক্তুাও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে তিনি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অন্ধকার ঘর থেকে উদ্ধারের সময় ওই দুই ভাই গালাগাল, চিৎকার এবং এটা ওটা ছুঁড়ে আক্রমণের চেষ্টা করছিলেন। লম্বা দাড়ি, চুল, কঙ্কালসার শরীরের অপরিচ্ছন্ন এই দুই ভাই ওই সময় অন্ধকার ঘরের মেঝেতে বসেছিলেন।

সাংবাদিকরা ছবি তোলার সময় কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করেন।

বগুড়া পৌরসভার ১১নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার বলেন, তিনি নির্বাচন করার সময় ওই বাসায় ভোট চাইতে গেলে এই দু’ভাই তাকে তাড়া করেন। তখনই তিনি তাদের মানসিক অসুস্থতার কথা জানতে পারেন।

তিনি বলেন, তাদের এই অসুস্থতা সম্পত্তি বিষয়ক কিংবা পীর ফকিরের কারণে হতে পারে।

মানিক-রতনের খালা রাবেয়া খাতুন লাকির বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, ১৫ বছর যাবৎ এ দু’জনকে তাদের বাবা বাসায় আটকে রেখেছেন। শুধু তাই নয় তিনি স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে নির্যাতনও করেন।

রাবেয়া খাতুন জানান, তার বোনকে (মানিক-রতনের মা ফাতেমা) নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকবছর আগে মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্টে অভিযোগ দাখিল করেও তাদের এক কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে কোনো ফল হয়নি। এদেরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

তাই এবার স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।

মানিক রতনের বাবা আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস মানিক এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। রতন এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন।

“এরপর তারা একটি তাবিজ নিয়ে আসে। তাবিজটি ফেলে দেয়ার পর তাদের অবস্থা এমন হয়েছে,” বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, দুই ভাই পানি পান করতেন না। তাদের ধারণা তাদের নানী পানির মধ্যে মন্ত্র পড়ে দিয়েছেন। তাই বাইরে থেকে বিভিন্ন জুস এনে তাদের খাওয়ানো হতো।

ওরা পায়খানা-প্রস্রাব ঘরের মধ্যেই করতেন। আলো পছন্দ করেন না। বিছানায় ঘুমান না।

মালতিনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) অসিত কুমার জানান, দু’টি অন্ধকার কক্ষ থেকে তাদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার ফজলুল বারি মিঠু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এরা সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত।এ রোগ হলে নিজেকে বন্দী মনে করে। তারা এককেন্দ্রিক ও সন্দেহপ্রবন হয়। সবাইকে শত্র“ মনে করে। এটি বংশানুক্রমিক রোগ বলেও জানান তিনি।

মিঠু আরো বলেন, মানিক-রতনের মা ফাতেমা বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বোন মুক্তাকেও চিকিৎসা দেওয়া হবে।

বগুড়া ব্লাস্টের প্রোগাম অফিসার এনামুল কবির সুমন জানান, তারা ঘটনাটি স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে জানতে পেরে উদ্ধারে এসেছিলেন। চিকিৎসার পর সুস্থ হলে এ ঘটনার পেছনে কী রয়েছে তা খুঁজে দেখা হবে।

স্থানীয় সুরভি মহন্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ওটি একটি ভূতুড়ে বাড়ি ছিল। কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হতো না। গভীর রাতে চিৎকার শোনা যেত। এলাকার কেউ তাদের খবরও রাখত না।

মানিক-রতনের বাবা ছাড়া ওই পরিবারের সবাই মানসিক ভারসম্যহীন বলে মনে হয়, বলেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন