বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১২

৭নং বিপদ সংকেত

ধেয়ে আসছে ‘আকাশ.......

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি গতকাল সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। গত মধ্যরাত থেকে ‘আকাশ’ নামের এই ঘূর্ণিঝড় শুরুর পূর্বাভাস দিয়ে আবহাওয়া বিভাগ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং এসব এলাকার অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহের ওপর দিয়ে ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারীবর্ষণ হতে পারে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং এসব এলাকার অদূরবর্তী চর ও দ্বীপসমূহে স্বাভাবিকের জোয়ারের চাইতে ৪ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। গতকাল সারাদিনই সেখানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। সেখানে রেডক্রসের কর্মীরা মাইকের মাধ্যমে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় গতকাল সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন লঞ্চঘাট ও নৌ বন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি আজ মঙ্গলবার ভোর অথবা সকালে চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানবে। চট্টগ্রাম বিমান বন্দর সন্ধে সাড়ে ৬টা থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা।
বরিশাল অফিস জানায়, ঝড়ের আশংকায় আতংকিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের এক কোটি মানুষ। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে গতকাল সোমবার দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে সকাল থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ২৮টি রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তখন বিআইডব্লিউটিএ সেনাবাহিনীর সহায়তায় লঞ্চঘাটে মাইকিং করে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, ঘুর্ণিঝড় কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। রেডিওতে শুনে ও সাগরের বেগতিক অবস্থা দেখে শত শত জেলে নৌকা উপকূলে নিরাপদ স্থানে চলে আসতে দেখা গেছে।
পিরোজপুর অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের আশংকায় উপকূলে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার নিয়ে জেলেরা নিরাপদে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। সাগর দূরবর্তী উপজেলাসমূহে ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। সিপিপি’র কর্মীরা হ্যান্ডমাইকযোগে নিম্নাঞ্চলে সতর্ক বার্র্তা প্রচার করে জনগণকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। নৌবাহিনী পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন স্থানে জেলেদের নিরাপদে আসতে সাহায্য করছে।
দৌলতখান (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার মনপুরা, দৌলতখান, চরফ্যাশনে দমকা হাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
বরগুনা (উত্তর) সংবাদদাতা জানান, গতকাল থেকে টিপটিপ বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে চলেছে। সাগর উত্তাল হয়ে পড়ার কারণে দুপুর থেকে সাগরে অবস্থানকারী মাছ ধরার শত শত ট্রলার পাথরঘাটা, বরগুনার সখিনা, আশার চর, ফকিরহাট, নলী এলাকায় ফিরে আসছে।
মংলা থেকে সংবাদদাতা জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশংকায় সুন্দরবন উপকূলের লোকজন আতংকিত হয়ে পড়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় সেখানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও বাতাস প্রবাহিতসহ গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছিল।
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক খবরা-খবর রাখার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকাগামীসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সাগরে মাছধরা নৌকা ও ট্রলারসহ সকল নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে সংবাদদাতা জানান, কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গপোসাগর নিম্নচাপের প্রভাবে সোমবার সকাল থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে। ৭/৮ ফুট উঁচু ঢেউ কূলে আছড়ে পড়ছে। আতংকিত হয়ে পরেছে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্ধ শতাধিক পরিবার।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন