রাজনৈতিক কারণেই বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন বলে মনে করেছেন তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি বলেন, ইলিয়াস যেহেতু রাজনীতি করেন, সঙ্গত কারণেই তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকতে পারে। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কারণে কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে কি না, তা তার জানা নেই বলেও জানান তিনি। গতকাল বনানীর নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলছিলেন। এ সময় ইলিয়াসের ছোট ভাই আসকির আলী, পারিবারিক বন্ধু ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের এক সপ্তাহ পরও তার স্বামীর খোঁজ না পাওয়া ও উদ্ধারে অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।
লুনা বলেন, আমার স্বামীকে যারাই নিয়ে যাক-সরকারের কাছে তার তথ্য থাকতে হবে। মানবতা রাজনীতির ঊর্ধ্বে- এটি বিবেচনায় রেখে ইলিয়াস আলীর সন্ধান দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। লুনা গতকাল রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাত্ করেন।
গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানীর নিজ বাসভবনের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ড্রাইভার আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপি দাবি করছে, সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইলিয়াস তার নেত্রীর নির্দেশে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারেন। ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী লুনা বনানী থানায় একটি জিডি করেছেন। এছাড়া হাইকোর্টে একটি রিটও করেছেন। গত ২ মে লুনা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইলিয়াস আলীকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন লুনাকে।
লুনা বলেন, এক সপ্তাহ হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস নিয়ে এসেছি, কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। অপেক্ষা করতে করতে এখন আশাহত হয়ে যাচ্ছি। এরপরও সরকার একটি ভালো খবর দেবে-এমন আশায় বুক বেঁধে আছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বোন ডেকেছেন। তার ওপর আমার পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। তিনি আমার নিখোঁজ স্বামীকে খুঁজে বের করে দিতে পারবেন বলে আশা করছি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য এখন আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না অভিযোগ করে লুনা বলেন, কী অদৃশ্য কারণে সরকারকে নিশ্চুপ থাকতে হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। সেই দিনের ভিডিও ফুটেজ ভালোভাবে পরীক্ষা করারও দাবি জানান লুনা।
বিএনপির হরতাল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে লুনা বলেন, এটি দলের ‘রাজনৈতিক’ সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবার সাক্ষাত্ করবেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাহসিনা রুশদীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক ব্যস্ত। প্রথমবার যখন দেখা করেছি, তিনি আমাকে অনেক সমাদর করেছেন, বোন বলেছেন। আশা করি তিনি এটি মনে রাখবেন।
‘বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনা ঘটেছে কি না’-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে লুনা বলেন, দ্বন্দ্ব থাকবেই। গোয়েন্দারা যদি মনে করেন, এ ধরনের কোনো বিষয় আছে তাহলে যে-ই হোক না কেন, তাকে খুঁজে বের করুক। তাকে যারাই তুলে নিয়ে যাক না কেন, সরকারের এটি জানা থাকতে হবে। তাদের অনেক গোয়েন্দা আছে, ক্ষমতা আছে।
‘ইলিয়াসকে খুঁজে বের করতে সরকার কোনো ধরনের অবহেলা করছে কি না’-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি শুধু বলেন, আমি কোনো ধরনের সাড়া পাচ্ছি না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন