রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শত শত স্বাধীনতা প্রেমী যুবকরা হারিয়ে যাচ্ছে জামাত-শিবিরের নষ্ট থাবায়

জামায়াত ইসলামের মালিকানায় ও পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা "ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজে"
প্রজন্মকে জামাত-শিবির চক্র
ধীরে ধীরে নব্য রাজাকারে পরিণত করে।
আমি যখন ৭ম শ্রেনীতে পড়ি, তখন আমার বন্ধুরা পড়ত ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজে,তখনতাদের পাঠ্য ছিল গোলাম আজমের লেখা বই, "কিশোর মনে ভাবনা জাগে"
এবং আজ অবধি এই বই সেই
ক্লাসে পাঠ্য বই হিসেবে পড়ানো হচ্ছে।
তখনকার সময় বিএনপি-জামাত রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী প্রতিবছর একবার এই প্রতিষ্ঠানে আসতেন ওয়াজ-মাহফিল করার জন্য। ওয়াজের
নামে তিনি বুঝিয়ে দিতেন, কিভাবে এর আগের সরকার দেশ থেকে ইসলাম নির্মূল করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তন্ময় হয়ে সকল ছাত্ররা তার এই পলিটিকাল ওয়াজ শুনত, আর ইসলাম নির্মূল করার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি একদলা ঘৃনার থুতু ছিটাত আর জোরেশোরে "নাউজুবিল্লাহ" বলে উঠত।
যখনই মাহফিলের এক
পর্যায়ে তিনি বলতেন, আর চিন্তার কারণ নেই-দেশে এখন
ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় এসেছে;
সকলে জোশের সাথে বলে উঠত "আল্লাহু আকবার"।
এই সব প্রতিষ্ঠানে যেহেতু বাংলা-ইংরেজীর পাশাপাশি আরবী পড়ানো হয়, তাই বেশীর ভাগ প্রবাসী আর অসচেতন মধ্যবিত্তরা তাদের সন্তানদেরকে এখানে পড়তে দেয়।
যারা ছাত্রশিবির করত, তাদেরকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলত, আমরা "ফুলকুড়ির আসরে" ছিলাম আগে, সেখান থেকে বের হওয়ার পর ছাত্র-
শিবিরে যোগ দিয়েছি।
"ফুলকুড়ির আসর" জামাত-শিবিরের পরিচালনায় এই সেই
আসর,যেখানে ফুলকে কুড়িতেই নষ্ট করে ফেলা হয়। এই
সংগঠনটি সম্পূর্ণরুপে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানেই
শিশু-কিশোরদের শিখানো হয়, গোলাম আজম ছিলেন ভাষা সংগ্রামী। এই সংগঠনে, পড়ার বয়স থেকে শিশুরা অংশগ্রহন করে আর ষষ্ঠ শ্রেনীতে এসে শেষ করে।
ফুলকুড়ি থেকে উঠে আসা প্রত্যেকেই ষষ্ঠ শ্রেনীতে এসে আনুষ্ঠানিক ভাবে ছাত্রশিবিরে যোগদান করে।
ছাত্রশিবিরে যোগদান করা এইসব
কিশোর রা প্রথম অবস্থায়
থাকে শিবিরের সমর্থক। তাদের কাজ থাকে তখন জামাত-শিবিরের সম্পাদিত
কিশোর পত্রিকা "কিশোরকন্ঠ"
বিক্রি করা আর সংগঠনের রশিদ
হাতে নিয়ে নিয়ে সংগঠনের জন্য
চাঁদা সংগ্রহ করা। এই সব ছাত্ররা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মর্যাদা ও সুবিধা পেত যা অন্যদের জন্য ছিল লোভনীয় এবং আরাধ্য। এই
আকঙ্খা থেকেই তখন অবুঝ বয়সে প্রায় প্রত্যেকেই ছাত্রশিবিরের খাতায় নাম লিখাত।
খুব অল্পই ফিরে আসতে পারে,
বাকিরা যেতে থাকে অন্ধকার থেকে ঘোর
অমানিশার অন্ধকারের দিকে........
অনেকেই অনেক ভাবে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন,
আমার তথ্যের সত্যতা কতটুকু? তাদের উত্তরে বলছি, আমার উল্লেখিত বিষয়াবলির মধ্য দু-একটা বিষয়
ছাড়া প্রায় সব কটার আজও একই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যে কেউ খুব সহজেই কুমিল্লার টমসনব্রীজ সংলগ্ন ইপিজেড রোডে ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজে এসে এসব ঘটনাবলি নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করতে পারেন।
এই স্কুলে প্রতি ক্লাসে ছাত্রশিবিরের
বড় ভাইরা নিয়মিত আসে, তাদের কাজ হচ্ছে ছাত্রদের সাথে একটা ভাল সর্ম্পক করে, স্বাধীনতা-শেখ মুজিব এই সব বিষয়ে দুষ্টামির ছলে ছাত্রদের
মগজে বিকৃত ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া। প্রায় সমস্ত শিক্ষক এবং শিবিরের বড় ভাইরা এই কাজটাই করতেন।
নবম শ্রেনী ব্যবসায় শাখায় ধর্ম ক্লাস নিতেন
মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন। একদিন তিনি ধর্ম ক্লাসের ফাকে বললেন, আওয়ামী লীগ বলে শেখ মুজিব নাকি জাতির পিতা-
আসলে কি কথা ঠিক? কথা ঠিক নয়। আমাদের পিতা মোট ৩ জন- ১) আদিম পিতা হযরত আদম(আঃ), ২) মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম(আঃ)
এবং ৩)আমাদের প্রত্যেকের
জন্মদাতা পিতা। তা ছাডা আমাদের কোন পিতা নেই। এই কথা গুলো তিনি কয়েকবার ক্লাসের ছাত্রগুলোকে নিয়ে কোরাস করে পড়লেন।
বাঙলা পড়াতেন আক্তার স্যার। একদিন তিনি পড়ার ফাকে বললেন, রবি ঠাকুরের গান কোনো গান হল নাকি? শুনলেই ঘুম আসে। গান হচ্ছে নজরুলের, কী জোশ্ ইসলামী গজল গুলোতে।
কিছু বিষয় ছাত্রদেরকে শিবিরের বড় ভাইরা শিখাতেন। যেমন, জাতির পিতাকে বলা "জুতার ফিঁতা"; বঙ্গবন্ধুকে বলা "ভাঙ্গা বল্টু"। কেউ এখনও এই স্কুলে গিয়ে যদি ছোট ক্লাসের কোন ছাত্রকে প্রশ্ন করেন, তোমরা জাতির পিতা আর বঙ্গবন্ধুকে কি বল? উত্তরেই আমার কথার সত্যতা টুকু খুজে পাবেন ।
আমরা কয়েকজন বন্ধু একসাথে শহরের আরেকটি স্কুলে পড়তাম। আমার বন্ধু বাসার কাছাকাছির জন্য আর অন্যদের হোস্টেল সুবিধার জন্য-৭ম শ্রেনীতে একসাথে এসে এই স্কুলে ভর্তি হল। আমি সহ ঐ সব বন্ধুরা একসাথে আগের স্কুলে থাকতে বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে কঁপালে জাতীয় পতাকা বেধে শহীদ মিনারে ছুটে যেতাম। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের দিনে ঐ স্কুলে কাঙালী ভোজ হত, এসব অনুষ্ঠানে আমরা একসাথে মেতে উঠতাম। কিন্তু এই স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি পর অষ্টম শ্রেণীতে উঠতে উঠতেই আমার বন্ধু কয়েকজন একেবারে বদলে গেল। তারা তখন দেশ নিয়ে রাজনীতি নিয়ে খুবই সিরিয়াস হয়ে গেল। স্বাধীনতা, বিজয় তাদের কাছে অর্থহীন হতে থাকল প্রতিদিন। এই স্কুলটি কখনোই এই সব দিবস গুরুত্ব দিয়ে পালন করে না, থাকে নানা ইচ্ছাকৃত অবহেলা।
একদিন স্কুলে কোন এক কারনে ক্লাস ছুটি দিয়ে দিল তাড়াতাড়ি, আমার ঐ বন্ধুরা আমাকে স্কুল মসজিদে নিয়ে গেল একটা মিটিংয়ে এবং কয়েকজন শিবিরের বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তারা আমাকে সাদরে গ্রহন করলেন এবং বিভিন্ন উপদেশ দিতে থাকলেন এবং মাঝে মাঝে কয়েকটা প্রশ্ন করতে থাকলেন; এর মধ্য একটা প্রশ্ন হল, তোমার আব্বু কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে? আমি বললাম, আওয়ামী লীগ। তিনি মাথা নাড়িয়ে বললেন, তুমি? আমি বললাম, আমিও আওয়ামী লীগ। তিনি বললেন, ভালো। কিন্তু রাজনীতির পাশাপাশি আমাদের তো ইসলামী আন্দোলনও করতে হবে, দেশতো ক্রমশই ইহুদী-নাছাড়াদের হাতে চলে যাচ্ছে। আমি সম্মতি দিলাম। তিনি সেদিনের মত আর কিছু বললেন না, আরেক দিন কথা হবে বলে আমাকে কয়েকটি বই পড়তে দিয়ে বিদায় দিলেন।
এভাবেই প্রতিদিন একটু একটু করে শত শত স্বাধীনতা প্রেমী যুবকরা হারিয়ে যাচ্ছে জামাত-শিবিরের নষ্ট থাবায় অতল থেকে অতল গহবরের দিকে......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন