বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

জয় হোক মানব প্রেমের

  
ফেব্রুয়ারি ২০০২, ভারতের লকনোতে কনো এক সকালে আইকু লাল সান্দিল নামের এক হিন্দু চা বিক্রেতা,তার চায়ের দোকানের পাশে পরিতাক্ত বাগানে এক বাচ্চা ছেলেকে কুড়িয়ে পায়। বাচ্চাটার কাছে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তিন বছরের ঐ বাচ্চাটা শুধু তার নাম বলতে পারে, তার নাম আকবর।

সবাই যখন বাচ্চাটাকে রেখে চলে যাচ্ছিল,তখন অসহায় আকবরের কান্না না সইতে পেরে সান্দিল তাকে বুকে টেনে নিল।সান্দিল স্থানিয় মসজিদ,মন্দিরে এলান দিল আকবরের মা বাবাকে খুঁজতে,কিন্তু পেল না। তারপর সান্দিল তাকে স্থানিয় পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গেল। পুলিশ রাজ্যর সব কয়টি থানার Missing Report চেক করল। কিন্তু কনো ভাবেই পুলিশ তার আসল বাবা মার সন্ধান পেল না। অবশেষে পুলিশ সান্দিলকে পরামর্শ দিল যে বাচ্চাটাকে সরকারি অনাথ আশ্রমে রেখে আসতে। কিন্তু সান্দিলের মমতাময়ী হৃদয় পুলিশের কথা না শুনে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল।  

সান্দিল নিজের ছেলের মতো করে আকবরকে মানুষ করতে শুরু করলো।সান্দিল জানতো যে আকবর মুসলিম তাই সে আকবরকে নিয়ে গেল এক মাওলানার কাছে ইসলাম শিক্ষা দিতে,যাতে করে আকবর তার নিজের পরিচয় ভুলে না যায়।আর তখন থেকে একই ঘরে চলতে থাকলো দুই আলাদা আলাদা ঈশ্বরের প্রাথনা। সান্দিল তার সল্প অর্জিত অর্থে তাকে শহরের নাম করা ইস্কুলে ভর্তি করালো। বেশ ভালোই চলছিলো বন্ধুসুলভ এই দুই ধরমালম্বি পিতা পুত্রের সংসার।

২০০৭ সালের জুন মাসে তাদের সেই স্বর্গ নামের সংসারে ভাটা পড়তে শুরু করলো। এক টিভি সাংবাদিক মানব প্রেমের এই অপার মহিমার উপর এক সংবাদ প্রকাশ করলো। যা দেখে এক দম্পতি আকবরকে তাদের সন্তান হিসাবে দাবি করলো। তারা তাদের ছেলেকে ফিরে পাবার জন্য পুলিশের দারস্ত হলো। পুলিশ সান্দিল এবং ৮ বছরের আকবরকে থানায় হাজির করলো। কিন্তু ঐ দম্পতির কাছে আকবরকে তাদের সন্তান প্রমান করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না। আর আকবরো তার পিতা সান্দিলকে ছেঁড়ে যেতে নারাজ। অবশেষে মামলা গড়াল আদালতে।

শুরু হলো দুই পক্ষের উকিলের তর্ক যুদ্ধ। চলতে থাকলো কঠিন কঠিন সব শব্দের অবাধ বিচরণ। যার সবই প্রায় সান্দিল আর আকবরের অজানা। তবে তারা এটা পষ্ট বুজতে পারছিলো। আদালত পাড়ায় আজ যতো সব আয়োজন সবই তাদের বিচ্ছেদের জন্য। 

অনেক তর্ক যুদ্ধ চলার পর বিজ্ঞ বিচারক ঐ দম্পতি আর আকবরের DNA টেস্ট করার। DNA (deoxyribonucleic acid) এক কথায় এটা Human bodyর blueprint. Since জেনেছে যে মানুষ তার শরীরের অর্ধেক DNA তার মায়ের কাছ থেকে পায়,আর অর্ধেক DNA তার বাবার কাছ থেকে পায়। সহজ ভাষায় DNA হচ্ছে একটা Signature যা মা -বাবা তার সন্তানের মধ্য রেখে যান। রক্তের সম্পর্কতো DNA Test এর মাধ্যমে নিধারন করা যায়। কিন্তু ভালোবাসার সম্পর্ক কোন টেস্ট এর মাধ্যমে করা যায়?? তাহলে কি ভালোবাসার signature এর কি কনো দাম নেই।
 
২০ দিন পর আদালতের রায় দিবে। আন্দিল তার ভগমানের কাছে প্রাথনা করেছে যেন তাদের আলাদা না করা হয়,আবার আকবর তার আল্লাহর কাছে প্রাথনা করেছে সে যেন তার পিতা (আন্দিল) এর সাথে থাকতে পারে। DNAটেস্ট ম্যাচ করলো ঐ দম্পতীর সাথে। অর্থাৎ ঐ দম্পতিই হচ্ছে আন্দিলের Biological Parents. কিন্তু বিজ্ঞ বিচারক সব কিছু বিশ্লেষণ করে সিধান্ত দিল যে, আকবর তার পিতা অর্থাৎ আন্দিলের কাছেই থাকবে। আর সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত পৃথিবী গেঁয়ে উঠলো ভালোবাসার গান “ মানুষ মানুষের জন্য”। তাই আজ সমস্বরে বলতে ইচ্ছা করছে -জয় হোক মানব প্রেমের, গতিময় হোক মানব প্রেম।
সূত্রঃ ইন্টারনেট



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন