মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০১০

বাংলাদেশে 'মোবাইল মানি' সেবার অপার সম্ভাবনা

বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান সেবার (মোবাইল-মানি) বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের টেলিযোগাযোগ নীতিমালা এবং নিয়ন্ত্রকবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়া। সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, এ দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এ সেবা চালুর জন্য একটি আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে। এতে মোবাইল ফোন অপারেটর ও ব্যবহারকারী দুপক্ষই লাভবান হবে।
গবেষণা দলের প্রধান ড. এরুইন এলামপ বলেন, দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন প্রবর্তিত বিভিন্ন সেবার গ্রহণযোগ্যতা বিচার করে এ সম্ভাবনার বিষয়টি উঠে এসেছে। ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায় 'গ্রামীণফোন লেডিস'-এর মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোবাইল ফোনের ব্যবহারকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রামীণফোন এবার মোবাইল পেমেন্ট স্কিম চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে, যা বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারুণ উপকৃত করবে।
বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও অধিক হারে মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয়েছে গত দশকে। ছয়টি দেশে পরিচালিত লার্ন এশিয়ার 'টেলিইউজ অ্যাট দ্য বটম অব দ্য পিরামিড' সমীক্ষায় দেখা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৩ শতাংশ পরিবারের জন্য একটি প্রি-পেইড মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশের স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর (বটম অব দ্য পিরামিড বা বিওপি) মধ্যে ৯৬ শতাংশ প্রি-পেইড সংযোগ ব্যবহারকারীই ইলেকট্রনিক রিচার্জ পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ করেন। অথচ উচ্চ আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ পদ্ধতিতে অ্যাকাউন্ট রিচার্জ করেন ৪১ শতাংশ ব্যবহারকারী। ড. অ্যালামপি বলছেন, জরিপের এ ফল ইলেকট্রনিক রি-চার্জের ব্যাপারে নিম্ন আয়ের মানুষের আস্থারই প্রমাণ। তাদের এ আস্থাকে 'মোবাইল মানি' সেবার ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ড. অ্যালামপি বলেন, বাংলাদেশ 'মোবাইল মানি' ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে ফিলিপাইনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে। পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে মোবাইল 'মানি সেবা' চালু রয়েছে। মোবাইল ফোনের নানা ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের দিক থেকে ফিলিপাইন বিশ্বে নেতৃস্থানীয়।
মোবাইল মানি বা এম-মানি হচ্ছে ইলেকট্রনিক মানির একটি রূপ। এ ব্যবস্থায় টাকার অঙ্ককে প্রথমে ইলেকট্রনিক মুদ্রায় পরিণত হয় এবং পরে তা মোবাইল ওয়ালেটে রাখা হয়। এরপর এই অর্থ এক গ্রাহকের কাছ থেকে অন্য গ্রাহকের কাছে স্থানান্তর করা হয়। এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশেও অর্থ স্থানান্তর সম্ভব।
লার্ন এশিয়ার গবেষণাপত্রে জানানো হয়, ফিলিপাইনে বর্তমানে দুই ধরনের এম-মানি সেবা চালু আছে। এ দুটি সেবা হলো 'স্মার্ট মানি' ও 'জি ক্যাশ'।
খুচরা ক্রয়, ইউটিলিটি বিল এবং এক গ্রাহক থেকে অন্য গ্রাহকের মোবাইলে টাকা স্থানান্তরের জন্য এ দুটি সেবা ব্যবহার হয়। ফিলিপাইনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এম-মানির মাধ্যমে ২০ ডলার রেমিট্যান্স স্থানান্তরে ফি'র ছয় শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় করা সম্ভব।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ শতাংশ পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য প্রবাসে অবস্থান করেন। এ ছাড়া আরো ১০ শতাংশ পরিবারের উপার্জনকারী সদস্যটি অন্য জেলায় অবস্থান করেন। এ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসীরা মাসে গড়ে ১৮৫ ডলার করে পরিবারের কাছে পাঠান।
এসব জনগোষ্ঠীর মাত্র দুই শতাংশ অর্থ স্থানান্তরের বর্তমান পদ্ধতিগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট। বর্তমান ব্যবস্থায় অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট ও অয়্যার ট্রান্সফার পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এম-মানি সেবার মাধ্যমে রেমিট্যান্স স্থানান্তরের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে লার্ন এশিয়ার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন