বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১১

গিরিশচন্দ্র বসুর ‘সেকালের দারোগার কাহিনী (১৮৮৫)’

সেকালের দারোগার কাহিনী
প্রথম প্রকাশ: ১৮৮৫
গিরিশচন্দ্র বসু
(১৮২৪ ১৮৯৮)
গিরিশচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন ১৮২৪ সালে। তাঁর জন্মস্থান বা পিতৃ-মাতৃ পরিচয় বিশেষ জানা যায় না। তাঁর জীবনকালে ও সাহিত্যিক সক্রিয়তার সময়ে আরো কয়েকজন ‘গিরিশচন্দ্র’ ছিলেন, এমনকি ‘গিরিশচন্দ্র বসু’ নামেও সাহিত্যিক ছিলেন। সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠার দিক থেকে অন্যান্য গিরিশচন্দ্ররা বেশি খ্যাত ছিলেন। যেমন ‘গিরিশচন্দ্র বসু’ নামে একজন কৃষিবিজ্ঞানী ছিলেন যিনি ইউরোপ থেকে কৃষি ও উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন এবং এসব বিষয়ে বিভিন্ন বই লিখেছেন।
—————————————————————–
cover-se-da-ka.jpg
পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে সাহেবদিগের কথা জানিবার জন্য, তাঁহাদের পুস্তকই আমাদের প্রধান উপায়। তদ্ভিন্ন কলিকাতা নগরের রাস্তাঘাটে যে অল্পবিস্তর ইউরোপবাসীদিগকে আমরা দেখিতে পাই, তাহাতেই আমরা বুঝিতে পারি, যে ইতর সাহেব এক ভয়ানক জীব। তথাপি ইহারা ইউরোপের ইতর লোকের যথার্থ আদর্শ নহে। ইহাদের অপেক্ষা যে আরও কত পরিমাণে অপকৃষ্ট মনুষ্য আছে, তাহা আমাদের জানিবার উপায় নাই; কেবল অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া মনকে প্রবোধ দিতে হয়। তাই বলিতেছি যে বাঙ্গালী চোরের সহিত সাহেব চোরের তুলনা হইতে পারে না।সেকালের দারোগা কাহিনী/গিরিশচন্দ্র বসু
—————————————————————–
এর বাইরে তিনি ইউরোপ ভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে দুই খণ্ডে ‘ইংরেজ চরিত বা জন্ বুল (ফরাসি বইয়ের অনুবাদ)’ লিখেছেন। আরো একজন গিরিশচন্দ্র বসু (কায়স্থতত্ত্ব-কৌমুদী–১৮৮৫) মূলত সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন। এছাড়া গিরিশচন্দ্র নামে কোলকাতায় বিখ্যাত নাট্য-ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ফলে বিভিন্ন বই-পুস্তকে তাদের লেখা বই থেকে শুরু করে জন্ম ও মৃত্যু তারিখ পর্যন্ত পরস্পরবিরোধী তথ্য আছে। এত দিন পরে সেই তথ্যগুলি থেকে সঠিক তথ্য নির্ণয় করা কঠিন।

—————————————————————–
আমি যখন কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালীতে ছিলাম তখন মধ্যে মধ্যে দুই একজন বেদিয়া আসিয়া ঐরূপ থানাঘরে রাত্রিতে বাস করিয়া প্রাতে চলিয়া যাইত। ইহারই এক ব্যক্তির নিকট তাহারা কি প্রকারে চুরি করে তাহার অনেক বিবরণ সংগ্রহ করিয়াছিলাম। কিন্তু সে বহুদিনের কথা হইল, সকল কথা আমার ভাল করিয়া স্মরণ নাই, যাহা কিছু মনে আছে, তাহা এই স্থানে বিবৃত করিব। বেদিয়ার বর্ণনা তাহার কথার ভঙ্গিতে লিখিলাম।
…শীতকালের রাত্রিতে অঙ্গের গহনা খুলিয়া লইতে হইলে নিদ্রিত ব্যক্তির গাত্রে হাত দিবার অগ্রে আগুনের হাঁড়িতে আমাদের দুই হস্তই সেঁকিয়া গরম করিয়া লইতে হয়, কারণ তাহা না হইলে ঘুমস্ত স্ত্রীলোকের শরীরে ঠাণ্ডা হাত লাগিলে, তাহার জাগিবার সম্ভাবনা থাকে। বাক্স সিন্দুক বাহিরে আনিয়া ভাঙ্গি। মাল হস্তগত করা হইলেই বেদিয়া চোর গৃহ পরিত্যাগ করে না। রান্নাঘরে প্রবেশ করিয়া হাঁড়িতে যাহা কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহা আমরা আহার করি, কারণ তাহা না হইলে সেই রাত্রে আমাদের আর আহার জুটিবার উপায় থাকে না। আমরা আহার করিয়া সেই রসুইঘরে শৌচ প্রস্রাব ত্যাগ করি। ইহা আমাদের একটি নিয়ম। আমাদের বিশ্বাস যে এই কার্য্য না করিলে আমাদের অমঙ্গল ঘটিবার সম্ভাবনা। মাল হস্তগত করিয়া তাহা দিবসের স্থিরীকৃত স্থানে লইয়া যাইয়া গোপন করিয়া রাখি। আমরা এক গ্রামে এক সময়ে কখনও দুই বাড়ীতে চুরি করি না, তবে সহর বাজার ব্যাপক স্থানে তাহা করিয়া থাকি।
সেকালের দারোগা কাহিনী/গিরিশচন্দ্র বসু
—————————————————————–
তবে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বর্তমান বইয়ের লেখক ১৮৫৩-১৮৬০ পর্যন্ত পুলিশের দারোগা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং চাকরিজীবনের স্মৃতি নিয়ে ‘সেকালের দারোগার কাহিনী’ লিখেছেন। ‘সেকালের দারোগার কাহিনী’ প্রথম প্রকাশিত হয় ‘নবজীবন’ মাসিক পত্রিকায়, সম্ভবতঃ ১৮৮৫ সালে। ‘নবজীবন’ প্রকাশিত হয় অক্ষয়চন্দ্র সরকারের সম্পাদনায় ১৮৮৪ সালে। কোথাও কোথাও নবজীবনের প্রকাশসাল ১৮৮৫ লেখা থাকলেও সেটি সম্ভবতঃ ভুল; কেননা ১৮৮৫ (১২৯২ বাং) সালে গত এক বছরের ‘নবজীবন’-এর সব সংখ্যা নিয়ে সংকলন বের করেন অক্ষয়চন্দ্র সরকার। এই সংকলনের ভূমিকায় তিনি নবজীবনের এক বৎসর পূর্ণ হওয়ার বিষয়টি জানান।
যাই হোক, ‘সেকালের দারোগার কাহিনী’ প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৮৮৮ সালে। কোলকাতা নাকি
—————————————————————–
আজকাল কত জন কত রূপক, কত নাটক, কত কবিতা লিখিতেছেন; কিন্তু কেহই দেশের অব্যবহিতপূর্ব্বকালের বৃত্তান্ত সমস্ত আপন আপন অভিজ্ঞতা অনুসারে বিবৃত করিতে লেখনী ধারণ করেন নাই।অনেকে অনেক বিষয় লেখা অযোগ্য বলিয়া তুচ্ছ করিতে পারেন, কিন্তু যিনি ভাবীকালে বঙ্গদেশের ইতিহাস লিখিবেন তিনি দেখিবেন যে অনেক তুচ্ছ সংবাদ অভাবে সম্পূর্ণ ইতিহাস অঙ্গহীন থাকিবে। এই বিবেচনায় কেবল বর্ত্তমান পাঠকগণের মনোরঞ্জনের নিমিত্ত নহে, কিন্তু ভবিষ্যৎ ইতিহাস-লেখকদিগের সাহায্যের উদ্দেশ্যে, এই দেশের দস্যুদিগের কীর্ত্তি-কলাপের এবং সেই সঙ্গে ভূতপূর্ব্বপুলিসের কার্য্যপ্রণালীর যতদূর পারি বর্ণনা করিতে প্রবৃত্ত হইলাম।সেকালের দারোগা কাহিনী/গিরিশচন্দ্র বসু
—————————————————————–
ঢাকা—কোথা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় সেটি নিশ্চিত নয়। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে উভয় নগরের উল্লেখই পাওয়া যায়।
‘সেকালের দারোগার কাহিনী’র আর্টস ই-বুক সংস্করণ প্রকাশিত হলো। এই বই ও লেখক সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া গেলে পরবর্তী আর্টস সংস্করণে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
অনলাইনে পড়ুন অথবা/এবং ডাউনলোড করুন:
গিরিশচন্দ্র বসুর ‘সেকালের দারোগার কাহিনী (১৮৮৫)’
সেকালের দারোগার কাহিনী
অনলাইনে পড়তে উপরের ছবিতে ক্লিক করুন
অনলাইন পাঠের জন্য মাউজ ক্লিকে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর মতো করে ফ্লিপ করা যাবে। ই-বুক উইন্ডো প্যানেলের নিচের দিকে ’save pages’ বাটনে ক্লিক করে ই-বুকটির পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড করা যাবে। এছাড়া জুম করার জন্য ক্লিক করতে হবে, আর ফুলস্ক্রিন করার জন্য ই-বুক প্যানেলে নির্দিষ্ট বাটন আছে।

ডাউনলোড করুন: সেকালের দারোগার কাহিনী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন