শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য বিনিময় ও ইন্টারনেট ব্যবহারের কনফিগারেশন সেটআপ


লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের (ল্যান) মাধ্যমে বাড়ি অথবা অফিসের একাধিক কম্পিউটারকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব। মূলত কেব্লের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করে এই নেটওয়ার্ক। ফলে নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা কম্পিউটার থেকে ফাইল বিনিময় ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়। নেটওয়ার্কের সঙ্গে একটিমাত্র ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ দিয়েই একাধিক কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব।

ল্যান স্থাপন পদ্ধতি

কম্পিউটারের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি লাগবে। দুটি কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য হাব বা সুইচের প্রয়োজন নেই; শুধু একটি কেব্লের দুই প্রান্তে কানেক্টর বসিয়ে দুই কম্পিউটারের ল্যান কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করে দিলেই হবে। তবে দুইয়ের বেশি কম্পিউটার যুক্ত করতে অবশ্যই হাব বা সুইচ ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একাধিক ল্যান কার্ড যুক্ত করতে হবে।
হয়ে যান নেটওয়ার্ক মাস্টারছবি ১
ইথারনেট কেব্লের মাধ্যমে হাব বা সুইচ যুক্ত করতে হবে। বাজারে নানা ধরনের হাব বা সুইচ পাওয়া যায়। কম্পিউটারের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ৪, ৮, ১৬, ২৪ বা নির্দিষ্টসংখ্যক পোর্টের হাব বা সুইচ কিনতে হবে। মনে রাখবেন, একটি পোর্টে শুধু একটি কম্পিউটারই যুক্ত করা যাবে। (ছবি ১)
এবার হাব বা সুইচটি রাখার জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করতে হবে। এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে, যেখানে রাখলে এর নিরাপত্তায় ঘাটতি হবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোনো কম্পিউটার থেকে হাব বা সুইচের দূরত্ব যেন ১০০ মিটারের বেশি না হয়। কারণ সংযোগের জন্য ব্যবহৃত ইথারনেট কেব্ল্ সর্বোচ্চ ১০০ মিটার পর্যন্ত দূরত্বে সঠিকভাবে তথ্য (ডাটা) পাঠাতে পারে।
জায়গা নির্বাচনের পর এবার কম্পিউটারের সঙ্গে হাবের সংযোগ দিতে হবে। এই সংযোগ করার জন্য দরকার হবে ইথারনেট কেব্ল্। এগুলো বাজারে 'ক্যাট-৫' ও 'ক্যাট-৬' নামে পরিচিত। হাব থেকে প্রতিটি কম্পিউটারের দূরত্ব হিসাব করে পরিমাণমতো 'ক্যাট-৬' কেব্ল্ কিনে নিন। ঝামেলা এড়াতে কেনার সময়ই হাব থেকে প্রতিটি কম্পিউটারের দূরত্ব অনুযায়ী কেব্ল্ কেটে এর দুই মাথায়ই আরজে-৪৫ (RJ-45) কানেক্টর লাগিয়ে নিতে পারেন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে দরকার হবে ইথারনেট পাঞ্চার। ছবির মতো করে তার ও কানেক্টর সংযোগ করে নিতে হবে।
(ছবি ২) ও (ছবি ৩)।
হয়ে যান নেটওয়ার্ক মাস্টারছবি ২ হয়ে যান নেটওয়ার্ক মাস্টারছবি ৩
ক্রস ওভার কেব্ল্ ক্রসের ক্ষেত্রে কেব্লের এক প্রান্তে থাকা ১ নম্বর সরু তারটি অন্য প্রান্তের ৪ নম্বর তার হয়ে গেছে। একইভাবে ২ ও ৬ নম্বর সরু তার যথাক্রমে ৬ ও ২ নম্বর হয়ে গেছে। বাকি সরু তারগুলো সব একই নম্বরে আছে।
স্ট্রেইট থ্রু এ ক্ষেত্রে এক প্রান্তে থাকা সরু তার যে নম্বরে আছে, অন্য প্রান্তেও সেই একই নম্বরে থাকবে।
এবার কেব্লের এক প্রান্ত হাব বা সুইচের পোর্টে এবং অন্য প্রান্ত কম্পিউটারের ল্যান কার্ডের ইথারনেট পোর্টে যুক্ত করলেই ল্যান তৈরির প্রথম ধাপ শেষ হবে।
দ্বিতীয় ধাপে নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা সব কয়টি কম্পিউটারের পরিচয় বা আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিটি ডিভাইসের জন্য আলাদা আইপি নম্বর দিতে হবে। একই নেটওয়ার্কে একাধিক কম্পিউটারে একই আইপি দিলে কাজ হবে না। তাই প্রতিটি কম্পিউটারের জন্য আলাদা আইপি নির্ধারণ করে দিতে হবে।
এবার কম্পিউটারের Local Area Connection অপশনে প্রবেশ করে মাউসের ডান বাটন ক্লিক করে Properties নির্বাচন করতে হবে। প্রদর্শিত general ট্যাবের উইন্ডোর নিচের দিকে থাকা Show icon (Task bar-এ কানেকশন আইকন প্রদর্শনের জন্য) এবং Notify me-তে টিক চিহ্ন দিতে হবে।
এবার উইন্ডোর মাঝামাঝি Internet protocol (TCP/IP) অপশন নির্বাচন করতে হবে এবং তার নিচে প্রপার্টিজে ক্লিক করলেই নতুন আরো একটি উইন্ডো আসবে। এতে ডিফল্ট হিসেবে Obtain ip automatically অপশন নির্দিষ্ট করা থাকে। তবে ইচ্ছামতো আইপি ঠিকানা বসাতে পরের অপশনে অর্থাৎ Use the following address অপশন নির্বাচন করতে হবে। এখানে আইপিসহ সাবনেট মাস্ক ও গেটওয়ে লেখার জায়গা পাওয়া যাবে। এবার গেটওয়ের জায়গা ফাঁকা রেখে নিচের মতো করে পূরণ করতে হবে-
IP address : 192.168.100.1Subnet mask : 255.255.255.0
এভাবে দ্বিতীয় কম্পিউটারে IP address : 192.168.100.2 ও Subnet mask : 255.255.255.0 বসাতে হবে। এভাবে প্রতিটি কম্পিউটারেই আইপি বসাতে হবে। মনে রাখবেন, আইপি শুধু ১৯২.১৬৮.১০০.১ থেকে ১৯২.১৬৮.১০০.২৫৪ পর্যন্ত বসাতে পারবেন। অর্থাৎ মোট ২৫৪টি কম্পিউটার সংযোগ করা যাবে এ পদ্ধতিতে।
আমাদের ব্যবহার করা আইপিটি 'সি' ক্লাসের আইপি। 'এ', 'বি', 'ডি' ও 'ই' ক্লাসেরও আইপি হতে পারে।
নেটওয়ার্ক সেটআপ করার পর তা ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ দুটি কম্পিউটারের মধ্যে ডাটা বা ফাইল বিনিময় করার বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।
হয়ে যান নেটওয়ার্ক মাস্টারছবি ৪
উদাহরণস্বরূপ দুটি কম্পিউটারের আইপি যথাক্রমে ১৯২.১৬৮.১০০.২০ ও ১৯২.১৬৮.১০০.৮৫।
এবার প্রথম কম্পিউটারে Start-> run টাইপ করুন ping ১৯২.১৬৮.১০০.৮৫-t
এবার দেখুন কমান্ড প্রম্পটে কিছু লেখা আসছে। যদি লেখাগুলো ছবির মতো হয়, তাহলে নেটওয়ার্কের সংযোগ ঠিক আছে (ছবি ৪)। এবার ctrl + c চাপলে কমান্ডটির কাজ শেষ হবে।
ইন্টারনেট সংযোগ
একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের জন্য নেটওয়ার্ক করার পর চাইলে একই সংযোগ ব্যবহার করে কম্পিউটারগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে একটি রাউটার এবং যেকোনো ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) সংযোগ।
নেটওয়ার্কে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিতে প্রথমে রাউটারকে সুইচ বা হাবের কাছাকাছি (১০০ মিটারের মধ্যে) স্থাপন করতে হবে। এবার রাউটারটি চালু করে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে হবে। আইএসপি আপনাকে একটি আইপি, সাবনেট মাস্ক ও গেটওয়ে দেবে। বাজারে বিভিন্ন মডেলের রাউটার পাওয়া যায়। তাই রাউটারের ম্যানুয়াল অনুযায়ী আইপি নির্দিষ্ট করতে হবে।
এবার একটি কেব্ল্ নিয়ে তার এক প্রান্ত রাউটারে ও অন্য প্রান্ত নির্দিষ্ট ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে সংযুক্ত করতে হবে। ম্যানুয়ালে থাকা আইপির শেষ নম্বরটি পরিবর্তন করে ১ থেকে ২৫৫ এর মধ্যে যেকোনো একটি সংখ্যা বসাতে হবে। যেমন- ম্যানুয়ালে যদি রাউটারের ডিফল্ট আইপি বলা হয় ১৯২.১৬৮.১০০.১ তাহলে আপনি বসাবেন ১৯২.১৬৮.১০০.২।
এবার ইন্টারনেট ব্রাউজার খুলে অ্যাড্রেস বারে রাউটারের আইপি লিখে এন্টার চাপলেই রাউটার কনফিগারেশন প্রম্পট আসবে। রাউটারের যে পোর্টে আইএসপির সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেই পোর্টে আইএসপি থেকে দেওয়া আইপি, সাবনেট মাস্ক ও গেটওয়ে বসিয়ে সেভ করতে হবে। এবার যে পোর্টে কম্পিউটারের সংযোগ রয়েছে সেই পোর্টে আইপি ১৯২.১৬৮.১০০.২৫৪, সাবনেট মাস্ক ২৫৫.২৫৫.২৫৫.০ লিখে সেভ করতে হবে।
সেভ করার পরপরই দেখা যাবে রাউটারের ঠিকানা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এটা খুবই স্বাভাবিক। এবার আপনার কম্পিউটারের আইপি ঠিকানা আবার পরিবর্তন করে ১৯২.১৬৮.১০০.* (* এর পরিবর্তে যেকোনো সংখ্যা) সিরিজের একটা আইপি লিখে ব্রাউজারে গিয়ে ১৯২.১৬৮.১০০.২৫৪ টাইপ করে এন্টার চাপতে হবে। দেখবেন, রাউটারের কনফিগারেশন প্রম্পট আবার ফিরে এসেছে। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো, একই সিরিজের আইপি না হলে রাউটারের ঠিকানা হারিয়ে যাবে।
এবার কম্পিউটার থেকে কেব্ল্টি খুলে সুইচের একটি পোর্টে লাগালেই রাউটার কনফিগারেশনের কাজ শেষ।
এবার নেটওয়ার্কে থাকা প্রতিটি কম্পিউটারের আইপি কনফিগারেশনে প্রবেশ করে কোনো তথ্য পরিবর্তন না করে শুধু গেটওয়েতে রাউটারের আইপি (আমাদের উদাহরণ ১৯২.১৬৮.১০০.২৫৪ ) বসিয়ে দিন।
ব্যস, হয়ে গেল।
এভাবে নেটওয়ার্কে থাকা সব কয়টি কম্পিউটারেই তথ্যবিনিময়ের পাশাপাশি ইন্টারনেটও ব্যবহার করা যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন