সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরীর ডাইনি

ছেলে তখন ইন্টারে পড়ে। বোকা সোকা ছেলে। চপলতায় ডুড সাজতে পারেনা। আহাম্মক টাকে ঠিকি চিনে নেয় ক্লাসের কোন সুন্দরী ফাকিবাজ। বন্ধুত্বের প্যাকেজ অফার করে।
- তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড
- ক কি। ফ ফ্রেন্ড। তাও আমার সাথে
- ওহ রাকিব ইউ আর সো সুইট
.
রাতে দিনে বাক্যালাপ হয়। খিল খিল হাসিতে হৃদয়ে কম্পন উঠে বোকা ছেলের্। ভালোবাসা গলে গলে ঝরে বালিকার কন্ঠে
- ক্লাসের সবচেয়ে সুইট ছেলে যে তুমি জান
- অ্যা মানে
- আচ্ছা শুন আমার প্র্যাকটিক্যাল খাতাটা একে দাওনা। আমার না কাল একটা কাজ আছে
- সমস্যা কি!
- উফ বাবুটা এত্ত এত্ত সুইট উম্মা
বাংলালিংক চুম্বনে ছেলের মাথা থ্রিজি বেগে ঘুরায়। স্বপ্নটা বড় হতে থাকে। সে সাথে বড় হতে থাকে কাজের লিস্ট।
প্লিয লক্ষী বাবু নোটটা করে দাও
.
প্লিয প্লিয কেমির সাথে কথা আছে। পঞ্চাশটা টাকা ফ্লেক্সি করনা বাবু। রাততো মাত্র এগারোটা। এখন না পাড়লে কখন?
.
বাবু ডাকে কম্পিত হৃদয়ে ছেলে ছুট দেয় কার্ড আনতে। নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেয়। এত ছেলে থাকতে ওর আব্দার শুধু আমার কাছে। কার্ডটা পেয়ে ছেলেকে আর একবার চুম্মা ছুড়ে দিয়ে বালিকা ব্যাস্ত হয়ে পড়ে কেমির নাম দিয়ে নতুন ভাইয়ার সাথে ভালোবাসার কেমিস্ট্রি ক্লাসে
.
এদিকে বোকা ছেলে সুস্থির সুখ নিয়ে অস্থির রাত্রি কাটায়। ঘটনাটা বোধহয় ঘটেই যাচ্ছে।
নিজের পড়াশোনা গোল্লায় উঠে। টাইম কই। বালিকার নোটের প্রায়োরিটি সবার আগে
- শুননা বাবু। একটা কাজ আছে। প্লিয তুমি আলীম স্যারের ক্লাসের পড়াটা টুকে নিও
বালিকা যখন হাতিরঝিলে প্রেমমাতৃক কাজে ব্যাস্ত ,বাবু তখন ক্লাসে বসে দুই খাতায় পড়া টুকতে বেদিশা অবস্থায়।
.
বালকের স্বপ্নটা যত জাল বুনে ,বালিকার কন্ঠের মধু তত বেশী ঝড়ে। মধুর বিনিময়ে কামলা খাটা কর্মসূচী চলতে থাকে মহাদ্যমে
.
দুই একবার বাবু ডেকে ,হাত টাত ধরে,আর মোবাইলে ভার্চুয়াল চুম্মার বিনিময়ে বেকুবটাকে দিয়ে যদি নোটস ,মোবাইল কার্ড আর কলেজের ব্যাগ আল্গানোর মত কাজ করা যায় তাহলে ক্ষতি কি। বাবু থেকে যদি ভাল কিছু হয় বাবুই সই।
.
বোকা ছেলে এসব বুঝেনা। সে শুধু বাবু ডাক শুনে আর মনে মনে বিশবছর মেয়াদী ফ্যামিলি প্ল্যানিঙ্গে বাবুর আব্বু পর্যন্ত চিন্তা করে যায়। সরল মনে সরল ভালোবাসা
.
একদিন ঠিক করে কথাটা বলেই ফেলবে। বালিকার প্রিয় ফুল বেলী। ওর জন্মদিনে বেলীফুলটা পেছনে লুকিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে। দুরু দুরু বুক। ও কি করবে ,কিন্তু ওত বলে ও নাকি আমাকে ক্লাসে সবচেয়ে ভালোবেসে। হয়ত ও চায় আমিই আগে এগিয়ে যাই।
মোড়টা ঘুরতেই চোখে পড়ে তাকে। আজ সে রিকশায় নয় ,স্পোর্টস বাইকের পেছনে এসেছে। বালিকার হাত দুটো সামনের হ্যান্ডসাম হাঙ্কের কোমড় জড়িয়ে ধরা।
বোকা ছেলের পৃথিবীতে ভাঙ্গনটা শুরু হয়। লাফ দিয়ে নামে বাইক থেকে
- আরি বাবু ,মিট মাই বি এফ সাইফ।
- হ হাই
- সাইফ ও আমার সবচেয়ে কিউতি বাবু। তোমাকে বলেছিলাম না। ও না থাকলে আমার পাশ করা হতনা,ডেটও করা হতোনা
বোকা ছেলের কানে এসব কিছুই ঢুকেনা। পেছনে লুকিয়ে রাখা বেলীফুলের মালা পেছনেই থেকে যায়। হাতের চাপে ছিড়ে ছিড়ে পড়ে ফুল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে একশো একটা স্বপ্ন
.
মনে তার হাজারটা প্রশ্ন। বাবু ডাকটা কয়জনকে ডাকা যায়। বাবু জিনিসটা আসলে কি। বাবু কি প্রেম , বন্ধুত্ব নাকি বন্ধুত্ব আর প্রেমের মাঝামাঝি বেজন্মা কোন কিছু। সুবিধামত অর্থের পরিবর্তন হয় যে বাবুর
.
সেটা না হোক ,চুমু টাও কি আসলে এতই সস্তা। হায়রে কপাল ,নোটসের বিনিময়ে চুমু কর্মসূচী
অসহায়ের হাসি হেসে ওঠে বোকা ছেলে। পাশ দিয়ে দিয়ে সাই সাই করে চলে যায় হ্যান্ডসাম হাঙ্কের কোমড় জড়িয়ে থাকা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরীর ডাইনি..যে ডাইনি সুন্দরীতে পাল্টে শিকার ধরে রক্ত পান করে। হৃদয়ের রক্ত
.
বাছবিচার শুধু গায়ের রঙ্গে হয়না। পকেটের ওজনেও হয়। একদিকে এমন যেমন সাদা কালোর ফর্সার রেখা টানা হয়। অন্যদিকে তেমন বাইক,মানিব্যাগের হিসাবটাও কিন্তু কড়া হয়। আজীবন আউলা ঝাউলা খোচা দাড়ির ছেলেকে ভালোবাসার খোচা দিতে দিতে তার হৃদয়ে ইনফেকশন করে,শেষমেশ ক্রেডিট কার্ডেই গিয়ে থামে উচ্চাবিলাসী বালিকা। যারা ফুলে ফুলে ঘুরে মধু পান করে অবশেষে ভাঙ্গে মনকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন