শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৬

মানুষের উচ্চতা তার শরীরে নয় মানুষের উচ্চতা হল তার স্বপ্নে ,মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

আমার এক বন্ধু ছিল, যে একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসার পরেও রিজেক্টেড হয়েছিল কারণ মেয়েটার তার হাইট ভালো লাগে নাই। বন্ধুর হাইট ছিল পাচ ফিট চার্। যে মেয়ের পেছনে অসাধারণ একাগ্রতায় বন্ধু চার বছর ঘুরেছে ভালোবেসে, সে মেয়ে প্রেম প্রস্তাবের জবাবে বলেছিল
- আপনার হাইট অনেক কম। নিজে কোনদিন খেয়াল করেছেন ?
.
যাই হোক এইডা নিয়ে ফেয়ার এন্ড লাভলি সুন্দর মানে কি শুধুই ফর্সা টাইপ এডও বানাবেনা এবং বিপ্লবীরা সাদা কালো বিপ্লবও শুরু করবেনা। কারণ এটা ছেলেদের সাথে ঘটা ডিসক্রিমিনেশন মার্কেটে খাবে না
.
সুতরাং সুন্দর মানে কি শুধুই ফর্সা এইসব আজাইরা চাপা মাইরা আসলে লাভ নাই। একটা মেয়ের ক্ষেত্রে কালো সাদা বিভেদ যেমন অন্যায় একটা ছেলের ক্ষেত্রে লম্বা খাটো বিভেদ করাটাও অন্যায়। নিজের বেলায় সবাই যেখানে লম্বাটা আর সুন্দরটাই খুজে
.
আমার পরিচিত এক ছেলেকে দেখতাম নিজের হাইট নিয়ে ভয়ঙ্কর ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগতে। পার্সোনাল লাইফে প্রচন্ড সফল এবং এস্টাবলিশড হওয়ার পরেও সে ছেলে বিয়ে করতে চাইতোনা কারণ তার মনে হত তার হাইট কম বলে তাকে কোন মেয়ে বিয়েই করবেনা। তার হাইট ছিল পাচ ফিট দুই। আমি একবার তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি সে উত্তর দেয়
- মেয়ে দেখতে গেলে মেয়ে যখন আমার হাইট দেখে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে নিজেকে ভীষণ ছোট লাগে
.
নিজের শারিরীক উচ্চতা নিয়ে এই ধরণের হীনমন্যতায় ভোগাকে সাইকোলজির ভাষায় নেপোলিয়ন সিন্ড্রোম বলে। এইখানে নেপোলিয়ন আসল কোথায়?
.
ঘটনা হইল ,সম্রাট নেপোলিয়নের যুদ্ধবাজ মনোভাব দেখে ব্রিটিশরা সেসময় বাজারে একটা গুজব রটিয়েছিল। যে ফ্রান্সের নেপোলিয়নের নিজের শারিরীক উচ্চতা কম ,তাই সে যুদ্ধ করে সবকিছু জিতে নিজের এই আক্ষেপ ঘুচাতে চায়। যদিও নেপোলিয়নের হাইট পাচফিট ছয় ছিল যা এভারেজ ফরাসীদের সমান। তারপর থেকেই উচ্চতা নিয়ে মানসিক হীনমন্যতায় ভোগাকে নেপোলিয়ন সিন্ড্রোম বলে
.
আবার এমন অনেক ছেলেকে দেখেছি বয়স হয়ে গেছে গালে দাড়ি হয়ত যথেষ্ট উঠে নাই সেটা নিয়ে বিরাট টেনশনে থাকতে
- দোস্ত আমার দাড়ি যে উঠেনা এটার ট্রিটমেন্ট কি
এমনকি অনেকে এটাকে নিজের পুরুষ সত্বার প্রতি একটা অপমান বলে মনে করে
.
সারাদিন আমির খান ,লিও মেসিদের দেখার পরও উচ্চতা নিয়ে কমপ্লেক্স দাড়ি মোচ নিয়া টেনশনের কারণ আর কিছুনা। আমাদেরি নিজেদের ছোট মানসিকতা
.
আমরা নিজেরাই ফেয়ার লাভলির সাদা কালো বিজ্ঞাপন দেখে বাহ জোশ জোশ করি এবং তারপর আয়নার সামনে যেয়ে নিজের শেডটা আরেকটু ফর্সা করতে এক অনবদ্য সংগ্রাম শুরু করি
.
আমরাই নিজেরাই সাদা কালো বিভেদ করার জন্য সমাজ কে ধিক্কার দেই অতচ নিজের বেলায় লম্বা ছেলেটাকেই খুজি। মানানোর ব্যাপার আছেনা?
.
আবার আমরা নিজেরাই, নিজের উচ্চতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগি আবার বিয়ের বেলায় যাইয়া ফর্সা মেয়ে খুজি। ইয়ে মানে সোন্দর হইতে হইব তো
.
আচ্ছা বাদ দেন এক সো কলড বেটে মানুষের গল্প শুনাই
.
১৮৮৪ এর ১৬ই এপ্রিলের লন্ডনের কোন এক নিম্ন মধ্যবিত্ত এলাকায় এক ছোট বাসায় এক ছেলের জন্ম হয়। বাবা মারা যাওয়ায় এবং মা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় সে ছেলেকে মাত্র দশ বছর বয়সে পেটে খাদ্য জোগাতে রাস্তায় নামতে হয়েছিল।
.
১৯৭৭ সালে সেই ছেলে ৮৮ বছর বয়সে যখন মারা যায়। সে ছেলের উচ্চতা তখন মাত্র ৫.৪ ইঞ্চি
.
আর তার নামের পাশে ছিল তিনটা অস্কার ,ব্রিটিশ নাইটহুড এবং সম্ভবত এন্টারটেইনমেন্ট জগতের ইতিহাসে সবচাইতে ফেমাস পার্সোনালিটির টাইটেল
সে পাচফিট চার ইঞ্চি উচ্চতার সো কলড খাটো ছেলেটার নাম কি ছিল ?
চার্লস স্পেন্সার চাপলিন ওরফে চার্লি চ্যাপলিন

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন