সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৬

মেসে জীবনটা হইল একটা এডভেঞ্চার

মেসে থাকা পোলাপাইনের জীবনটা হইল একটা এডভেঞ্চারের মত। বুয়া না আসলে খাবার কেমনে খামুর এডভেঞ্চার্। মাসের শেষ দশ দিন কেমনে পাড় করমুর এডভেঞ্চার্। মেসের ছেলেদের প্রত্যেকের একটা মামার দোকান থাকে।
.
পৃথিবীর একমাত্র মামা যারা ভাগিনাকে সিগারেট দেয় তাও বাকিতে 
.
মেসের ছেলেদের সকালটা শুরু হয় তাই মামার দোকানে। ক্লাস না থাকলে বা অফ ডেতে দশটা এগারোটায় কোনমতে বিছানা ছাইড়া দাত ব্রাশ করে শিম্পাঞ্জির মত চুল নিয়া ঢুলতে ঢুলতে মামার দোকানের বেঞ্চে যাইয়া বসে। রাজকীয় স্টাইলে চা অর্ডার দেয়
- ওই মামা চা দাও
এরপর মেসের ছেলেদের জাতীয় খাদ্য অলটাইমের বনরুটি নিয়া সেটা জাবর কাইটা কাইটা খায়। এই অলটাইম বন না থাকলে মেসের পোলাপাইনের সকালের বেরেকফেরাস্ট কেমনে হইত অন্তত এই কারণে হইলেও অলটাইমের মালিক রে জাতীয় পুরস্কার দেয়া দরকার্। আচ্ছা যাই হোক রাজকীয় নাস্তাটা সাইরা মেসের রাজপুত্ররা যখনি সিগারেট টা চাইতে যায় তখনি বেরসিক মামা বাগড়া বাধায়
- সিগারেট বাকি নাই। আগের টাকা শোধ করেন মিয়া
যাই হোক বেরসিক হইলেও মামার দিলটা নরম। শেষমেষ সিগারেগ দিয়াই দেয় নিজেরেই নিজে গালি দিতে দিতে
- কেন যে বজ্জাতগুলারে বাকি দেই 
.
কথিত আছে পৃথিবীতে মুরগী যত ডিম পারে তার অর্ধেক মেসের পোলাপাইনের পেটে যায়। মেসের মেন্যুতে ডিমের তরকারি আর ডেইলি সূর্য কোন দিকে উঠে দুইটাই কনস্ট্যান্ট ব্যাপার্।
- কি রানছে
- ডিম ভাজি
- কি দুপুরে
- ডিমের তরকারি
এই ডিম রাধতেও ব্যাপক আপত্তি থাকে অত্যন্ত দেমাগী মেসে রান্না করা বুয়াদের্। তেনারা মন চাইলে আসে মন চাইলে আসেনা। যেদিন আসেনা সেদিন দুপুরে ভুখা থাকা লাগে। কেন আসে নাই সেইটা জিগাইতে গেলেও বুয়ার কাছে ঝারি খাওয়া লাগে
- খালা কেন আসেন নাই
- মানে কইছি আমার বইনের বাইচ্চা হইছে সে বাইচ্চার নিউমোনিয়া হাম হেপাটাইটিস ঢাকা মেডিকেল
- আচ্ছা থাক থাক
আহারে জীবন। বাপ মার থেকে দূরে থাকি যেন এতিম হইয়া গেছি
.
মেসের ছেলেদের সবসময় বাকা চোখে দেখে বাড়িওয়ালা। খারাপ ব্যাবহারের দিক দিয়া ঢাকা শহরের ম্যাক্সিমাম বাড়িওয়ালা বিখ্যাত। তেনারা পানির মোটর বন্ধ কইরা ভাড়াটিয়াদের বাড়িটা কার মনে করাইয়া দেয়াকে নিজেদের কর্তব্য বইলা মনে করে
.
মেসের বাড়িওয়ালাদের আরেকটা গাজাখোরি ধারণা হইল ,মেসের পোলাদের একমাত্র কাম হইল তার তথাকথিত সুন্দরি মাইয়া কখন সিড়ি দিয়া নিচে নামে ,কখন উপরে উঠে , কখন বারান্দায় আসে সেইটা পর্যবেক্ষণ করা। তেনার ধারণা হইল তার মাইয়ারে দেখার লাইগাই টাকা খরচ কইরা মেস ভাড়া নিছে। এদিকে তার মাইয়া তারে আহাম্মক বানাইয়া বোটানিক্যালে বি এফের লগে কি করে সেই খবর কিন্তু তিনি জানেন না 
.
.
মেসের পোলাপাইনের রাইত কাটে পাচ কালায়। টুয়েন্টি নাইন হইল মেসের পোলাপাইনের সময় কাটানোর প্রধান মাধ্যম। সেই টুয়েন্টি নাইনেও কত ভেজাল শুনেন। টুয়েন্টি নাইনের নিয়ম আর এরশাদ কাগুর কথা মিনিটে মিনিটে চেইঞ্জ হয়। এক ডাকে বহু ডাকে ,কার্ডের বারি আছে বারি নাই ,সিঙ্গেল খেলা যাইব না সিঙ্গেল নাই ..একেবারে যাতা অবস্থা
.
প্রত্যেক মেসে একজন করে রোমিও থাকে যার কাম হইল মোবাইলে প্রেমিকার সাথে কথা বলা। কানের সাথে মোবাইলটা যেন সুপারগ্লু দিয়া আটকায় রাখে। সবাই মুভি দেখে ওই এককোণায় একজন গুটাইয়া বইসা রইছে। কে? রোমিও কথা বলে। সবাই কার্ড খেলে ওই এক কোণায় একজন কথা বলে। এমন কি বাথরুমের ভেতর থেইকাও মাঝে মাঝে রোমিওদের কথা ভাইসা আসে
- হুম জান বল হাগু করি 
.
মেসের ছেলেদের মাসের প্রথম দশদিন খুব চাঙ্গা কাটে। সন্ধ্যায় গ্রিল খাওয়া হয়
- আরে চল কাবাব খাই
বুঝেন নাই বাড়ি থেকে টাকা আসছে
.
আর শেষ দশ দিন মেসের পোলাপাইনের চেহারা আর পকেট দুইটাই সাহারা মরুভূমি হইয়া থাকে।
বাড়িতে ফোন দেয়া হয় মা কে
- কিরে গলা শুকনা কেন
- না মা এমনি
- হাতে টাকা পয়সা আছেত
- আরে আছে
মনের কষ্ট চাইপা রাইখা মানুষটাকে বুঝ দেয়া হয়। অবুঝ মা তবুও বুঝে নেয় ছেলের কষ্ট ,নিরবে চোখ ভেজায়।
.
মেসের ছেলেমেয়েদের জীবনটা এভাবেই কেটে যায়। কত রুক্ষতা কত অনিয়ম কত বিশৃঙ্খলা কোনমতে কেটে যাওয়া তবুও ভালোবাসার অভাব থাকেনা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন