শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬

মরচে পড়া বিবেক


সবকিছু পেয়েও, না পাওয়ার ব্যথাকে যারা ভুলতে পারে না। সবকিছু হারিয়ে, ফিরে না পাওয়ার দুঃখকে যারা ভুলতে পারে না। যারা নিজে কাঁদে, কিন্তু অপরকে কাঁদায় না। যাদের বুক ফাটে, তবু মুখ ফোটে না, তারাই মানুষ, তারাই দেবতা।

পান্থপথ মোড়ে জ্যামে আটকে আছে সুমন (কাল্পনিক নাম)। সিএনজির অবিরাম ঘড় ঘড় শব্দে মাথা ধরে গেছে সুমনের ।এমন সময় ছোট্ট একটি ছেলে এগিয়ে আসলো সুমনের দিকে । উদোম গা ,ময়লা ছেঁড়া প্যান্টটাতে ধুলোর এমন মোটা আস্তরণ পড়েছে যে আসল রংটাই চাপা পড়ে গেছে । ছেলেটা সিএনজির কপাটকে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আংগুল ঢুকিয়ে দু'হাতে আঁকড়ে ধরলো ।

"স্যার কয়ডা ট্যাহা দিবেন? ভাত খামু....."

ছেলেটার কথায় অস্বাভাবিক নির্লিপ্ততা । চোখের মণিটা ধকধক করছে । যেন সেখানে আগুন জ্বলছে ,ক্ষুধার আগুন । পকেটে হাত গেল সুমনের। একরাশ আশা নিয়ে হাড্ডিসার ছেলেটা মলিন মুখে সুমনের দিকে চেয়ে আছে। মানিব্যাগটা বের করে আনবে এমন সময় ট্রাফিকের তীব্র হুইসেল । সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে সব গাড়ি ছুট দিল।

ছেলেটা দৌঁড়াচ্ছে । সিএনজির পাশাপাশি ভীষণ জোরে দৌঁড়াচ্ছে । অনাহারী দূর্বল শরীর নিয়ে এত জোরে তাকে দৌঁড়াতে দেখে ভারী অবাক হচ্ছে সুমন ! ছেলেটা এক হাতে এখনো গ্রিলটা আঁকড়ে ধরে আছে ।

পরক্ষণেই যান্ত্রিক গতিশক্তির কাছে হার মানে সে ....ছেড়ে দেয় গ্রিলটা । মনটা এমনিতেই খারাপ ছিলো সুমনের, এই ঘটনার পর আরো খারাপ হয়ে গেল । বেচারাকে চারটে ভাতের জন্যে না জানি কত সংগ্রাম করতে হবে!!

সিএনজিওয়ালার উপর ভীষণ মেজাজ খারাপ হচ্ছে সুমনের । ব্যাটা তখন সিএনজিটাকে একটু সাইড করে হতো না ?

"ঐ মিয়া , তখন সিএনজিটা সাইড করলে না ক্যানো ? দেখলে না ছেলেটা ভিক্ষা চাইতে এলো?" সুমনের অকস্মাত্‍ ধমকে থতমত খায় সিএনজিওয়ালা ।
"স্যার তহন য্যামনে হুড়মুড়াইয়া গাড়িগুলান টান দিসে সাইড করতাম ক্যামনে আপনেই কন !"


তার কথায় যুক্তি আছে । ওপেন বড় সিগনালগুলোতে গাড়ির এত লোড থাকে যে ঐসময় কোন গাড়িরই থামার কিংবা সাইড করতে পারার কথা না ।

মোটেও তর্ক করতে ইচ্ছে করছে সুমনের । এরা বহুত চাপাবাজি করতে জানে । তাছাড়া চলন্ত অবস্থায় চালকের সাথে কথা বলা ঠিক না।
" জলদি চালাও মামা " এই একটা কথা বলেই সুমন চুপ হয়ে গেল । "এই তো স্যার কারওয়ানবাজার তো প্রায় পৌঁছায় গেছিগা"


কারওয়ানবাজার পৌঁছে সুমন সিএনজি চালকে তার ভাড়া দিয়ে সুজা হাটছে আর চিন্তা করছে ছেলেটাকে নিয়ে ''দুমুঠো ভাতের জন্যে না জানি কত সংগ্রাম করতে হচ্ছে ছেলেটাকে''.............

আমরা কারণে অকারণে প্রতিদিন অনেক খাবার অপচয় করি । আমাদের অভাব নেই অথচ আমাদের চারপাশে তাকালেই ক্ষুধার্ত মানুষের অভাব নেই কেন।
তবে কেনএই বৈষম্য ?পথের ধারে ছোট্ট শিশুটি যখন খেতে না পেয়ে দিনের পর দিন ভিক্ষের জন্য হন্যে হয়ে ছুটে বেড়ায় ,কুকুরের মত লাথি-গুঁতো-তাড়া খায় ,ক্ষুধা সইতে না পেরে ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট অর্ধনষ্ট খাবার খাবার খায় তখন আমাদের মরচে ধরে পড়া বিবেক কি একটুও নড়েচড়ে ওঠে না ?? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন