সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নামে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড

পৃথিবিতে জীব জানোয়ার এর বিবেকবোধ নেই,তাই বলে কি মানুষের ও বিবেকবোধ নেই? দিন দিন মানুষ যেন অমানুষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ এর কাজকর্ম দেখে নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে। বাঘ, সিংহ,ভাল্লুক, তারা হিংস্র না , হিংস্র হল আমাদের সমাজের কিছু মানুষ রুপি অমানুষ এর দল।

বিবেকবোধ থেকেও মানুষ মানুষকে কিভাবে হত্যা করতে পারে ?

জাতিসংঘে বাংলাদেশসহ সদস্যদেশগুলো অঙ্গীকার করেছিল ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। গতকালই আমার বড় মামা একটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের চাপায় প্রাণ হারান।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে,সড়ক দুর্ঘটনায় দিনে গড়ে ২৪ জন মারা যান। এর আগের বছরের চিত্রও ঠীক একই রকম। অবশ্য পুলিশের হিসাবে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান গড়ে ৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে জাতিসংঘের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশও সই করেছে,কিন্তু কোথায় তাদের লক্ষ্যমাত্রা? কোথায় তাদের বাস্তবায়ন?তাহলে কি এইটা শুধুই সই?তাহলে কি এইটা শুধুই পরিকল্পনা? যে খানে বাস্তবায়নের কোন ছুয়া নেই । আর কত মানুষে প্রাণ দরকার আপনাদের?

বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব সড়ক পরিবহন, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকারসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের।কিন্তু এইসব মন্ত্রণাল কোন বছর কত সড়ক দুর্ঘটনা কমানো হবে, এর কোনো কর্মপরিকল্পনাই নাকি এখনো করা হয়নি। কিছু সড়কের বাঁক সোজা করা এবং মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়া সরকারের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত বছর সারা দেশে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৪২ জন। আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন।সংগঠনটির হিসাবে, ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ৫ হাজার ৯২৮টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৮৯ জন। আর আহত হয়েছিলেন ১৭ হাজার ৫২৪ জন।(তথ্য প্রথম আল)

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়।আর সরকারের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার হিসাব রাখে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ গত বছরের হিসাব নাকি এখনো চূড়ান্ত করতে পারে নাই। তবে পুলিশের জানিয়েছে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা গেছেন। এর আগের বছর মারা গিয়েছিলেন ২ হাজার ৬৭ জন। দুর্ঘটনার সংখ্যা গড়ে ২ হাজার।(তথ্য প্রথম আল)

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নামে যে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড হচ্ছে তা একপ্রকার মহামারি। ইরাক বা আফগানিস্তানের ভয়াবহ যুদ্ধে যে প্রাণহানি হয়েছে, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা পরিস্থিতি তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু বিষয়টি যেন গা সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। গণমাধ্যমগুলোও প্রাণহানির সংখ্যা বেশি না হলে বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত না হলে সংবাদ প্রকাশ করে না।

পুলিশের কাছে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ বা মামলা করেও প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা মেলে না। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ান না বিত্তবানেরাও। এই অবহেলা-অবজ্ঞার মাঝে দিন দিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। বাড়ছে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা

বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ যানবাহনের মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রয়েছে ৩ লাখের বেশি। আর যেসব যানবাহনের ফিটনেস আছে, সেগুলোও যথাযথভাবে নেওয়া হয় না। কারণ, ৪০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি যানবাহনের সনদ দেওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ খালি চোখে একটু দেখেই ফিটনেস দিয়ে দেয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিটনেস সনদ দেওয়ার যন্ত্র বিকল হয়ে আছে এক যুগ ধরে।

দেশে চালকের লাইসেন্স আছে সাড়ে ১৫ লাখ। এরও একটা বড় অংশ দেওয়া হয়েছে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া, শ্রমিক ইউনিয়নের দেওয়া তালিকা ধরে। অর্থাৎ প্রায় আট লাখ যানবাহনের কোনো চালক নেই। অথচ বাণিজ্যিক যানবাহনের প্রতিটির জন্য দুজন চালক দরকার হয়।

কোন দেশের সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে প্রতিবছরের জন্য আলাদা লক্ষ্য ঠিক করে কর্মসূচি নিতে হয়,কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের কোন পরিকল্পনাই যে নাই কোন মন্ত্রণালয়ের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন