সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ

নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের গল্প। স্টেজের পেছনে বসে উত্তেজনায় ঘামাচ্ছেন গিটার লিজেন্ড এরিক ক্ল্যাপটন। প্রচন্ড অসুস্থ এরিক। হেরোইন এডিকশন তাকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। পারবেন তো ঝড়
তুলতে গিটারে? যদি ভুল হয়?
.
ঠিক সে মুহুর্তে ক্ল্যাপটনের চোখে ভেসে উঠে হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশ নামক জন্মযুদ্ধে লিপ্ত এক দেশের মা হারা সন্তানটার ছবি...এর আগেই ক্ল্যাপটম পারফর্ম করতে পারবেন না বলে নিশ্চিত সবাই
.
সে ক্ল্যাপটন স্টেজে উঠলেন বাজালেন জয় করলেন। জর্জ হ্যারিসনের সাথে ক্ল্যাপটনের " হোয়াইল মাই গিটার জেন্টলি উইপ্স" গানে দুই লেজেন্ডের গিটার ডুয়েল লাইভ কনসার্টের ইতিহাসেরই অংশ হয়ে থাকবে। অসুস্থ ক্ল্যাপটন যার বাজাবার কথাই ছিলনা, সে ক্ল্যাপটন পুরো কনসার্টে একটা কর্ড মিস করলেন না...
This is Eric Clapton for you
.
বব ডিলান তো কনসার্টের আগের দিন থেকে একই কথা বলে যাচ্ছিলেন, জর্জ আমি পারবো না। কারণ এর আগের দুই বছর বব একদম গানই গাননি। সে বব স্টেজে উঠলেন ,দিলেন ইলেক্ট্রিফ্লায়িং পারফরমেন্স। এক রিদমে পাচ পাচটা গান... তাও বব ডিলানের কন্ঠে।
He is the maestro Bob Dilan
.
ড্রামের পেছনে ছিলেন চির তরুণ রিঙ্গো দা স্টার। বিটলসের রিঙ্গো। বন্ধু হ্যারিসনের ফোন পেয়ে নতুন অ্যালবামের কাজ ফেলে ছুটে এসেছেন রিঙ্গো। টাকা গেলে যাক,হ্যারিসনের আমাকে দরকার...বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের আমাকে দরকার
.
আর সবকিছুর শুরু হয়েছিল কখন? না ৭১ এ না,৫৮ এর ফেব্রুয়ারীতে ইংল্যান্ডের লিভারপুল শহরে যখন দুই বন্ধু জন লেনন, পল ম্যাকার্টনির সাথে জর্জ হ্যারিসনের প্রথম দেখা হয়। হোটেলে অডিশন দিতে গিয়েছিল তিনজন মিলে গান না শুনেই ম্যানেজার তারিয়ে দেয় বাচ্চা কাচ্চা বলে। সে তিন বাচ্চা কাচ্চাই রিঙ্গো দা স্টারের সাথে পরবর্তী ২০ বছরে রক এন্ড রোল গানের ইতিহাসই পাল্টে দেয়...টাইমস ম্যাগাজিন যে টাকে নাম দিয়েছে
Greatest musical journey ever
.
হা এই গল্পটা কনসার্ট ফর বাংলাদেশের গল্প
এই গল্পটা জর্জ হ্যারিসন নামক লেজেন্ডের বাংলাদেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পরার গল্প
.
"কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" কতটা সারা ফেলেছিল এর প্রমাণ পাওয়া যায় পরের দিন নিউইয়র্ক টাইমসের হেডলাইনে " বিটলম্যানিয়া সুইপস দা সিটি"।
.
জর্জ হ্যারিসন রবিশঙ্কর দুইজন না থাকলে যা হোতোনা। রোলিং স্টোন যাকে নাম দিয়েছিল " কনসার্ট অফ দা ডেকেড বলে"

জি এই আমাদের বাংলাদেশের জন্য সেদিন একি স্টেজে গেয়েছিল রিঙ্গো দা স্টার , এরিক ক্ল্যাপটন , বব ডিলান , বিলি প্রেস্টন লিওন রাসেলদের মত লেজেন্ডরা...
.
আর সবার আগে ছিল দা বিটলস জর্জ হ্যারিসন... আজ যার মৃত্যুদিবস
.
অনেকেই বলে একাত্তরকে কেন ধারণ করতে হবে?
This is one of the reason we have to keep 1971 in our heart
.
জর্জ হ্যারিসনরা আমাদের জন্য গেয়েছিল। এরিক ক্ল্যাপটনেরা বাজিয়েছিল। দুনিয়ার আর কোন দেশের এইটা বলার হ্যাডম নাই। জর্জ হ্যারিসনের কাছে বাংলাদেশ আজন্ম ঋণী থাকবে। পূর্ব রনাঙ্গনে যখন আমাদের ক্র্যাক গেরিলারা একের পর এক আরবান গেরিলা একশনে নিয়াজির পাকি সোলজারদের জীবন হারান করে দিয়েছিল, তখন হাজার মাইল দূ্রে জর্জ হ্যারিসন নামক এক লেজেন্ড তার গিটারটাকে অস্ত্র বানিয়ে সারা বিশ্বকে জানিয়েছিল যে ক্র্যাক জাতির জয়গান... আমরা সেই ক্র্যাক জাতি, আর হ্যারিসন আমাদের গানওয়ালা... বিটলস টিল মাই লাস্ট ব্রেথ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন