বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বিদেশ নামের সোনার হরিণ

বিদেশে থাকা পোলাপাইনের জীবনটা হইল একটা এডভেঞ্চারের মত। জব না থাকলে খাবার কেমনে খাবে এই এডভেঞ্চার্ । মাসের শেষ দশ দিন কেমনে পাড় করবে এডভেঞ্চার্।
বিধাতার কাছে খুব চাইতে ইচ্ছে করে হে বিধাতা ,কিছু সময়ের জন্য আমাকে দুইটা ডানা দাওনা আকাশে উড়ে বেড়ানো ঐ পাখিদের মত । একটি বার উড়ে গিয়ে দেখে আসি আমার প্রিয় স্বদেশটাকে , দেখে আসি আদরীনি মাকে, একটু আড্ডা দিয়ে আসি বন্ধু মহলে ।
প্রবাস জীবন মানে নিষ্ঠুর , নিঃসঙ্গ জীবন যাপন এবং প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেয়াল বিহীন কারাগারে এতিমের মত বসবাস করা । প্রবাস জিবনে যারা পদার্পণ করেছেন একমাত্র তারাই প্রবাস জীবন যে কেমন তার ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
এ কথাগুলো শুধু একা আমার নয় প্রবাসে থাকা প্রত্যকটি বাংলাদেশী ভাইদের । আজ তাদের নামের পাশে আরেকটি নাম এসে যোগ হয়েছে তাদের আরেকটি পরিচয় এখন তারা প্রবাসী।
হায়রে জীবন সংগ্রাম! এ সংগ্রামের অবসান হবে কবে? হয়তো কোনো দিনই হবেনা। মা-বাবা ভাই- বোন আত্মীয়স্বজন এমনকি নিজের স্বাদের স্ত্রীর মায়া-মমতা ভালবাসা ত্যাগ করে, সবার মুখে হাসি ফুটাবার জন্য , সোনালী স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য চালায় জীবন সংগ্রাম ।
ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস! যে ছেলেটি বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে থাকতে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত ঢেলে খেতো না, সেই সোনার ছেলেটি সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে ঘরে ফিরে নিজের হাতে রান্না করে খায়।কাপড় পরিস্কার করে, ঘর গোছায় অর্থাৎ জীবনের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই নিজেকে করতে হয়।
বিদেশে জীবনে প্রত্যেক ফ্লাট এ একজন করে রোমিও থাকে যার কাম হইল মোবাইলে প্রেমিকার সাথে কথা বলা। কানের সাথে মোবাইলটা যেন সুপারগ্লু দিয়া আটকায় রাখে। সবাই মুভি দেখে ওই এককোণায় একজন গুটাইয়া বইসা রইছে। কে? রোমিও কথা বলে।এমন কি বাথরুমের ভেতর থেইকাও মাঝে মাঝে রোমিওদের কথা ভাইসা আসে
- হুম জান বল হাগু করি
বেতনটা হাতে পেলে মাসের প্রথম দশদিন খুব চাঙ্গা কাটে । আর শেষ দশ দিন চেহারা আর পকেট দুইটাই সাহারা মরুভূমি হইয়া থাকে।
বাড়ি থেকে ফোন দেয় মা
- বাবা, আমার প্রেশার মাপার মেশিন পাঠাবি না
- কিনে রেখেছি। এইত সামনের সপ্তাহে পাঠাব
- কিরে গলা শুকনা কেন
- না মা এমনি
- হাতে টাকা পয়সা আছে
- আছে । কেন ?
- তোর বাবার শরিলটা ভাল নেই ডাক্তার দেখাই তে হইব
- ওকে আমি কাল কে টাকা পাটাই তে ছি
পকেটে ভাত খাবার টাকা নাই অবুঝ মনের কষ্ট চাইপা রাখে মাকে বুঝতে দেয়া হয় না। তবুও চলছে জীবন ,কাটছে দিন, এভাবেই চলতে থাকবে, সপ্ন সুখের পিছনে। ছুটতে ছুটতে আবার একদিন সবকিছু শান্ত নিরব হয়ে আসবে কতটুকু সুখ পেয়েছে কিংবা পাবে সেই হিসাব মেলাবার সাহস কারও হয়না,যখনি মেলাতে যায় চোঁখ দু’টো জলে ভেশে উঠে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন