বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভালোবাসায় নির্ভরশীল হয়ে যাওয়া মানুষগুলো একদিন জীবনের আকাশ হারিয়ে দেওলিয়া হয়ে পড়ে

গলির রংচটা হলুদ দোতলা বাসাটায় যে মানসিকভাবে অসুস্থ পাগলীনি মেয়েটা থাকে সে মেয়েটার জীবনের ড্রয়িংরুমটাও একদিন সাজানো গোছানো ছিল। রোজ রোজ নিয়ম করে ক্লাসে যাওয়া হত। জীবনটা ছিল বাসা থেকে ক্লাসের চেনা গলিতে সীমাবদ্ধ। একদিন মেয়েটার হাত ধরে অচেনা গলিতে নিয়ে যাওয়ার আচানক আশ্বাস নিয়ে আসে কোন এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। কানে কানে বলে
- চল ওই রাস্তায় যাই
- না আমার ভয় লাগে
- আমার হাতটা ধরো কোন ভয় লাগবেনা
- সত্যি তো...
হুট করে জীবনের রুটিনটা পাল্টে যায় ,হৃদয়ের সীমানাটাও অসীমে মিলায়। মেয়ে তখন ক্লাসের চেনা গলিটা ছেড়ে কোথায় কোথায় না হারাতে শিখেছে! মেয়েরা আবার ভালোবাসার আশ্বাসে ষোল হাত পানিতে নামার ক্ষমতা রাখে। নিজে ডুবে ,জীবনটাকেও ডুবায়।
ততদিনে জীবনের রুটিনটা ভালোবাসার মানুষের হাতে দিয়ে অনূভুতির সাইক্লোনে উড়ে চলেছে মেয়ে। সকালে সে ফোন না দিলে আজকাল দিনটাই শুরু হয়না
- কি হল
- তুমি জানোনা তুমি ফোন না দিলে আমার দিন শুরু হয়না
নিজে ঘড়ি হয়ে চাবিটা দিয়ে দেয় স্বপ্ন পুরুষের হাতে। দুপুরের ভাতটাও শুকনো লাগে তার ভালোবাসার ঝোলে যদি না ভেজে। আস্থার ভালোবাসায় তখন নির্ভরশীলতা বাসা বাঁধে। একদিন যে মেয়ে নিজের আঙ্গুনের ইশারায় নিজেকে চালাত আজকাল সেই মেয়ে নাকি নিজ মনেই বার বার জঁপে
-দুপুরে ও খেলে আমি খাব
- ওর জন্য একটা রুমাল কিনতে হবে
- বন্ধুদের সাথে যাবনা যদি ও পছন্দ না করে
- রাতে ঘুমোনোর আগে তার কন্ঠের ভালোবাসি হোক আমার ঘুমপাড়ানি গান
জীবনের ক থেকে খ প্রতিটা বাঁকের ঠিকাদারি কারো নামে লিখে দেয়ার আগে সাবধান করে আপনজন
- এতটা নির্ভরশীল হয়ো না
- কেন
- পৃথিবী এতটাও ভালো না
কোন এককালের সচেতন মেয়ে আজ ভালোবাসায় অচেতন হয়ে ভালোবাসিতে ভুলে একা একা বেঁচে থাকা ভুলে যায় যখন পুরোপুরি
-বাঁচব আমি কিন্তু বাঁচাবে তুমি
ঠিক তখনি অন্য কোন বালিকার শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় চতুর ম্যাজিশিয়ান। একদিন হুট করে চোখ খুলে দেখে মেয়ে সকালের কন্ঠ, দুপুরের আশ্বাস , রাতের আদর নিয়ে যে এসেছিল কেন যেন সে আর নেই। ভালোবাসাকে প্রার্থনা বানিয়ে ভালোবাসার মানুষ কে হৃদয়ের দেবতা বানিয়েছিল যে মেয়ে সেই মেয়ে আজ সব হারানোর ব্যাথা বুকে নিয়ে দেখে তার হৃদয়ের মন্দিরে প্রার্থনা করার সে দেবতা নেই। বোকা মেয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করে
- আমার প্রার্থনায় কি কোন ভুল ছিল?
পৃথিবী তখন মুচকি হেসে বলে
- সাবধান করেছিলাম,শুননি
সেদিনের পর থেকে গলির যে বাড়িটাতে মেয়েটা থাকত সে বাড়ি থেকে গভীর রাতে এক পাগলীনির চিতকার ভেসে আসে
ভালোবাসায় মানসিকভাবে নির্ভরশীল কখনোই হতে নেই। তোমার ঘুমিয়ে থাকা ,তোমার জেগে থাকা ,তোমার বেঁচে থাকাটা হৃদয়ের উইলে কারো নামে লিখে দিওনা। তোমার রুটিনটা তুমিই সাজিয়ে নিও। তোমার পাওয়া আঘাতের ব্যাথা শুধু তুমিই পাবে ,আর কেউ না। তোমার মনের মূল্য শুধু তোমার কাছেই আছে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন