রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

একুশ মানে কি শুধুই উৎসব

মাগো ওরা আমার মা ডাক কেড়ে নিতে চায়। আমরা আমাদের মায়ের ভাষার অধিকার আদায় করবই। মাগো তোমার ছেলে মা ডাকার অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরবে

নীলক্ষেত স্টাফ কোয়ার্টারে মেসে থাকত। ৫২ এর সেই আগুন ঝরা ফাগুনে মিছিলে যোগ দিতে গায়ে সাদা শার্টটা চাপিয়ে রাস্তায় নামে পাগল ছেলে সালাম। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বেরোন মিছিলে সামনের সাড়িতেই ছিল ছেলে। পুলিশের এলোপাথারি গুলিতে বুলেট বিদ্ধ হয় পেটে

তিনদিন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের করিডরে পড়ে ছিল। পাকস্থলী ফেটে মলমূত্র রক্ত মিশে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। যন্ত্রনায় তিনদিন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছে সালাম। এগিয়ে আসেনি পাকি সরকারের চাকর কোন ডাক্তার। তিন দিন পর সালামের পিতা ঢাকা পৌছে করিডরে ছেলেকে দেখতে পান। এপ্রিলের ৭ তারিখ মারা যায় সালাম
এই হল তারছিড়া সালামের ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার গল্প


মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই সালামের কবরটা কোথায় সেটা পর্যন্ত আমরা জানিনা।আজিমপুরে কবর দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সালামের কবর চিহ্নিত করা হয়নি। আজিমপুরে আছে,কিন্তু কোথায় আছে কোন কোণায় আছে কেউ জানেনা। ৬২ বছরে কেউ একবার ভাবেনি সালামের কবর টা কে চিহ্নিত করার কথা। কি দরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দীবস তো আছে ফুল আছে উতসব আছে। কবরের দরকার কি

সালামের বাবা আফসোস করে বলে গেছেন

"আমার ছেলেটা ভাষার জন্য প্রাণ দিল তার বদলে তার কবর টাও কেউ খুজল না। তোমরা তো শহীদ মিনারে যেয়েই খুশী। কিন্তু বাবা হিসেবে আমি একটাবারও ছেলের কবরের সামনে দাড়িয়ে জিয়ারত করতে পারলাম না।"
সত্যিটা হচ্ছে আমরা এতই বেইমান যে, যে ছেলেটা প্রাণ দিয়ে ভাষার অধিকার আদায় করল সে ছেলেটার কবর টাই খোজার চেষ্টা করলাম না আমরা। এইটাই হইল আমাদের তথাকথিত ভাষা শহীদ দের প্রতি শ্রদ্ধা।

জি এটাই সত্যি। সেদিন সালাম নামে এক তারছিড়া ছেলেটা গুলি পেটে নিয়ে মেডিকেলের করিডরে প্রাণ দিয়েছিল যাতে আজকের মফিজ মর্জিনা সকিনারা ভাষা দিবসে চিপায় যাইয়া সেলিব্রেশন করতে পারে। বন্ধুদের নিয়ে টিএস সি বইমেলা শাহবাগে চুটায় মজা করতে পারে।

সারাদিন ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরলে আর মজা করলে ভাষা শহীদদের প্রতি কিভাবে শ্রদ্ধা জানান হবে বুঝতে পারি না। ব্যাপার না, কিছু পাবলিক তো আবার ভাষা শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা বানায় ফেলে।

একুশ মানে কি শুধুই উৎসব, একুশ মানে যুবক সালামের পেটে গুলি নিয়া মেডিকেলের করিডরে যন্ত্রনায় আকাশ ফাটানো। একুশ মানে একজন সালামের মায়ের কাছে মা ডাকের অধিকার আদায়ের প্রতিজ্ঞা করা। একুশ মানে সালাম রফিক জব্বারের বুকের আগুন চোখে লাগিয়ে একশো চুয়াল্লিশ কে মাঝখানের আঙ্গুল্টা দেখাইয়া প্রচন্ড অহংকারে ভেঙ্গে চুরমার করা। একুশ মানে তারছিড়া সালামের রক্তে ভেজা সাদা শার্ট । একুশ মানে দু হাত তুলে বিধাতার দরবারে শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় ফরিয়াদে চোখ ভাসিয়ে যাওয়া

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন